পাতা:সাহিত্য-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪৪

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

১৩৬

বঙ্গভাষা ও সাহিত্য

আমাদের সৌভাগ্যক্রমে দীনেশচন্দ্রবাবুর বঙ্গভাষা ও সাহিত্য গ্রন্থের দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হইয়াছে। এই উপলক্ষে পুস্তকখানি দ্বিতীয়বার পাঠ করিয়া আমরা দ্বিতীয়বার আনন্দলাভ করিলাম।

 এই গ্রন্থের প্রথম সংস্করণ যখন বাহির হইয়াছিল তথন দীনেশবাবু আমাদিগকে বিস্মিত করিয়া দিয়াছিলেন। প্রাচীন বঙ্গসাহিত্য বলিয়া এতবড়ো একটা ব্যাপার যে আছে তাহা আমরা জানিতাম না; তখন সেই অপরিচিতের সহিত পরিচয়স্থাপনেই ব্যস্ত ছিলাম।

 দ্বিতীয়বার পাঠে গ্রন্থের অভ্যন্তরে প্রবেশ করিবার সময় ও সুযোগ পাইয়াছি। এবারে বাংলার প্রাচীন সাহিত্যকারদের স্বতন্ত্র ও ব্যক্তিগত পরিচয়ে বা তুলনামূলক সমালোচনায় আমাদের মন আকর্ষণ করে নাই; আমরা দীনেশবাবুর গ্রন্থের মধ্যে বাংলাদেশের বিচিত্রশাখাপ্রশাখাসম্পন্ন ইতিহাসবনস্পতির বৃহৎ আভাস দেখিতে পাইয়াছি।

 যে-সকল গ্রন্থকে বাংলার ইতিহাস বলে তাহাও পড়া গিয়াছে। তাহার মধ্যে বাদশাহদের সহিত নবাবদের, নবাবদের সহিত বিদেশী বণিকদের ও বণিকদের সহিত দেশী ষড়যন্ত্রকারীদের কী খেলা চলিতেছিল তাহার অনেক সত্যমিথ্যা বিবরণ পাওয়া যায়। সে-সকল বিবরণ যদি কোনো দৈবঘটনায় সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয় তবে বাংলাদেশকে চিনিবার পক্ষে অল্পই ব্যাঘাত ঘটে। বাংলাদেশের সহিত নবাবদের কী সম্বন্ধ ছিল। তাহার বিবরণ বাংলাসাহিত্যের ইতস্তত যেটুকু পাওয়া যায় তাহাই পর্যাপ্ত; তাহার অতিরিক্ত যাহা পাঠ্যগ্রন্থে আলোচিত হয় তাহা ব্যক্তিগত কাহিনীমাত্র।

 কিন্তু দীনেশবাবুর এই গ্রন্থে হুসেন-শা পরাগল-খাঁ ছুটি-খাঁ’র সহিত আমাদের যেটুকু পরিচয় হইয়াছে তাহাতে ইতিহাস আমাদের কাছে