সন। ১৩১২ 1 নিরক্ষর কবি ও গ্ৰাম্যকবিতা 8○ ছয়জন সঙ্গে যুক্তি করে, পাঁচজনেতে আড়িমারে ভক্তিরাখি গুরুর পায়ে নামের নৌকায় চড় না । এবার গুরুর নামে বাদাম দিয়ে ভবপারে যাও না । ইত্যাদি ৫ । ও গুরু সাধের ময়না কোন দিন উড়ে যাবে রে, উড়ে যাবে রে । তখন খালি খাঁচা পড়ে রবে রে, পড়ে রবে রে । গুরু আমার মনের মাণিক, আমি গুরুর পোষা শালিক, গুরুর দয়া বিনে ধরবে কাল বিড়াল এসে রে-বিড়াল এসে ৷ এইরূপ অলৌকিক শক্তিসম্পন্ন নিরক্ষর “গুরুসত্য”-প্ৰথা প্ৰবৰ্ত্তক কবিগণ অনবরত সপ্ৰেমকারুণ্য হৃদয়ে শিষ্যানুশিষ্যসহ এই নিম্নবঙ্গের নিরক্ষরসমাজে প্রতিষ্ঠা লাভ করিয়া স্বমতের পোষকতাসহকারে গীতিকবিত্বে বঙ্গভাষার শ্ৰীবৃদ্ধি সাধন করিয়া গিয়াছেন। গুরুসত্য সঙ্গীত কবিত্বরাজ্যে দ্বিতীয়স্থান অধিকার করিতে পারে। একটি কিংবদন্তী প্ৰকাশ করে যে, খুলনা জেলার বিখ্যাত নদী রূপশার নিকটবৰ্ত্ত আউটপোষ্ঠ “বাঁঠিয়াঘাটার” অপর পারস্থিত জনম নামক স্থানের একটি পোদজাতীয় ফকীর না কি সর্বপ্রথমে এই গুরুসত্য সঙ্গীত রচনা করিয়া বাদায় গমনশীল যাত্ৰিগণের নিকট প্রকাশ করে। কিন্তু আমরা জানি ○", এই গুরুসত্য গ্ৰন্থ পুরাতন অঘোরপন্থিমতের একটি অংশবিশেষ। অনেকগুলি গীতেও তাহার আভাস পাওয়া যায়। অঘোরপন্থিমতাবলম্বিগণ যেমন ব্যবহারে এবং আচারে কোন গণ্ডির মধ্যে নিবদ্ধ নহে, সেইরূপ গুরুসত্য মতাবলম্বিগণও কোন ক্রিয়াবিশেষের অধীন নহেন। এইমতে কোনরূপ অন্যভাবের উপাসনা নাই। কেবল একস্থানে সকলে সমবেত হইয়া গীতি প্রার্থনায় উপাস্তের উপাসনা করে। অঘোরপস্থিমতের সঙ্গে ইহার কতদূর মিল আছে, তাহা নিম্নের সঙ্গীতাংশে অনেকটা বুঝা যায়, যথা ৫ । চাই নে আর খাওয়া দাওয়া কুড়িয়ে খাবো মরামাস। তোমারে দেখবার জন্য ( দয়াল আমার ) চেয়ে আছি বারমাস। বিষ্ঠামুতে শরীর আমার গড়া বায়ুর জোরে। দিয়াছ প্ৰাণের দয়াল বাতাসে আমায় ভরে ৷ আমি তোমার তুমি আমার আর যে কিছু নাই। কওকি দয়াল চাদ আমার যাবে কিসে শ্বাস । যারে খাবো খেয়েছি তারে বসে বারমাস। ইত্যাদি এই গীতটির অনেকাংশ আমার স্মরণ নাই, যাহা স্মরণ ছিল, তাহাই উদ্ধত হইল। ইহাতে গুরুসত্য গীতের কতকটা মৰ্ম্ম অনুভাবে জানা যায় যে, এই মতাবলম্বিগণ এক অদ্বিতীয় ঈশ্বরের প্রতি মন দিয়া খাদ্যাখাদ্যের বিচার ও শুচি অশুচির বিচার আদৌ মানে না। এই জন্যই বলি যে এই প্ৰথা আর অঘোরপস্থিপ্ৰথা একই মস্তিষ্কের দুইরূপ ফল। অতঃপর আমরা আর একটি অভিনব গ্ৰাম্য কবিতার উল্লেখ করিয়া এই পরিচ্ছদ শেষ করিব।
পাতা:সাহিত্য পরিষৎ পত্রিকা (দ্বাদশ ভাগ).pdf/৪৯
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
