পাতা:সাহিত্য পরিষৎ পত্রিকা (প্রথম খণ্ড).pdf/১৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মুকুন্দরাম ও ভারতচন্দ্ৰ। বাল্যকালে শুনিতাম, ভারতচন্দ্রের ন্যায় কবি আর কখনও জন্মগ্রহণ করে নাই। শুনিতাম, বাঙ্গালী ভাষায় ভারতের কবিত্বের ন্যায় কবিত্ব আর হয় নাই, তঁহার ন্যায় মৌলিকতা অন্য কোনও কবির নাই, তাহার ন্যায় মধুরত্ব ও লালিত্যও অন্য কবির নাই। এখনও অনেকে ভারতচন্দ্ৰকে বঙ্গদেশের প্রধান কবি মনে করেন। মাননীয় পণ্ডিত রামগতি ন্যায়রত্ন মহাশয় লিখিয়াছেন, ভারতচন্দ্রের সিংহাসন গ্ৰহণ করিতে পারে, এরূপ কবি এখনও বঙ্গদেশে হয় নাই। অন্যান্য বঙ্গীয় লেখক ও পাঠকেরও মত এই যে, কাশীরাম, কৃত্তিবাস, মুকুন্দরাম প্রভৃতি প্রাচীন কবিগণ গুণাকর ভারতচন্দ্রের সমকক্ষ নহেন ; আধুনিক কবি মধুসূদন দত্তও ভারতের নিকটে স্থান গ্ৰহণ করিতে পারেন না। আমরা আদ্য এ বিষয়ে কোনও সমালোচনা করিব না । ভারতচন্দ্ৰ কি দরের কবি, তাহার নিষ্পত্তি করা আমাদের উদ্দেশ্য নহে। তবে যাহারা ভারতচন্দ্রের মৌলিকতার প্ৰশংসা করেন, তঁহার এক বার কবিকঙ্কণ মুকুন্দরামের কবিতা পড়িবেন, এইটা আমাদের প্রার্থনা | গুণাকর পত্রে পত্রে কবিকঙ্কণের নিকট ঋণী, কবিকঙ্কণের কবিত্ব পত্রে পত্রে নকল করিয়াছেন, কবিকঙ্কণের স্বাভাবিক ও সুন্দর বর্ণনাগুলি অলঙ্কার দিয়া কিঞ্চিৎ অস্বাভাবিক করিয়া তুলিয়াছেন। কবিকঙ্কণের কাব্য সরল, স্বাভাবিক ও সুপাঠ্য ; গুণাকরের কাব্য অধিকতর সুললিত, কিন্তু অস্বাভাবিক এবং অনেক স্থানে অপাঠ্য। আমরা এ বিষয়ে অদ্য কয়েকটি উদাহরণ দিতে ইচ্ছা করি। সতী ও দক্ষযজ্ঞের কথা লইয়া উভয় কবির কাব্য আরম্ভ হইয়াছে। শঙ্করের নিকট অনুমতি না পাইয়া, সতী অভিমানিনী হইয়া দক্ষালয়ে চলিলেন, এই কথা উভয় কবি বর্ণনা করিয়াছেন। মুকুন্দরাম সতীর অভিমানের স্বাভাবিক বর্ণনা দিয়াছেন, গুণাকর ভারতচন্দ্ৰ এই স্থলে সতীর দশরূপের বিস্তীর্ণ বর্ণনা দিয়া আপনার চাতুর্ঘ্য ও পাণ্ডিত্য দেখাইয়াছেন। অনুমতি দেহ হর, যাইব বাপের ঘর, যজ্ঞ মহোৎসব দেখিবারে । ত্ৰিভুবনে যত বৈসে, চলিল বাপের বাসে, তনয় কেমনে প্ৰাণ ধরে | চরণে ধরিয়া সাধি, কৃপা করি গুণনিধি, যাব পঞ্চ দিবসের তরে। চিরদিন আছে। আশ, যাইব বাপের বাস, নিবেদন নাহি করি ডরে ৷