পাতা:সাহিত্য পরিষৎ পত্রিকা (প্রথম খণ্ড).pdf/১৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

so সাহিত্য-পরিষদ-পত্রিকা । [ भांघ অবস্থাবিশেষে মাতৃভাষার সৌন্দৰ্য্যসম্পাদনে একান্ত পরামুখ। সৌন্দৰ্য্যতত্ত্বে ইহাদের কিরূপ অধিকার, তাহা সহৃদয় পাঠকবর্গের বিচাৰ্য্য। বলা বাহুল্য, আমরা এই উভয় শ্রেণীর মধ্যে কোন শ্রেণীরই পক্ষপাতী নাহি। সকল বিষয়েরই এক একটি নির্দিষ্ট সীমা আছে। কেহ এই সীমার বাহিরে গেলেই “সৰ্ব্বমত্যন্তং গৰ্হিতম” এই কথাটি স্বতঃই আমাদের মনে উদিত হয়। ভাষার উন্নতি, ভাষার পরিপুষ্টি, ভাষার সৌন্দৰ্য্যবৃদ্ধির পক্ষেও একটি নির্দিষ্ট সীমা থাকা উচিত। এই সীমার অতিক্রমকে আমরা “অতি বাড়াবাড়ি’ বলিয়া মনে করি। র্যাহারা সৰ্ব্ববিষয়ে সংস্কৃতভাবে চলিতে ইচ্ছা! করেন, পক্ষান্তরে র্যাহারা সৰ্ব্ববিষয়ে সংস্কৃতভােব পরিত্যাগ করিতে চাহেন, আমাদের ক্ষুদ্র বিবেচনায় তঁাহারা সকলেই “অতি বাড়াবাড়ি’ করিয়া থাকেন। সংস্কৃতের সহিত বাঙ্গালা অখণ্ডনীয় বন্ধনে আবদ্ধ ; বোধ হয়, চিরকাল এই বন্ধন অখণ্ডনীয় ভাবে থাকিবে। যিনি এই বন্ধন বিমুক্ত করিতে উদ্যত হইবেন, তিনি অসীম প্রতিভাশালী হইতে পারেন, কিন্তু তাহার সেই অসীম প্রতিভায় কখনও ভাষার সৌন্দৰ্য্য বা গাম্ভীৰ্য্য রক্ষিত হইবে না। যে শক্তি ভাষার প্রতিস্তরে প্রবেশ করিয়া, উহাকে সজীব করিয়া রাখিয়াছে, সে শক্তিকে একবারে দূরীভূত করা নিঃসন্দেহ দুরূহ ব্যাপার। যিনি সৰ্ব্বতোভাবে এই শক্তির প্রতিকুলত সাধন জন্য কাৰ্য্যক্ষেত্রে অবতীর্ণ হইবেন, তিনি আপনার ক্ষমতার অপব্যবহার করিবেন। মাত্র। পঞ্চম চার্লসের ন্যায়। মণ্ডলেশ্বর সম্রাট জৰ্ম্মণ ভাষাকে পদদলিত করিলেও উহার অসামান্য উন্নতি নিরুদ্ধ করিতে পারেন নাই। সংস্কৃতের সহিত ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধে আবদ্ধ থাকাতে বাঙ্গালার যে আভিজাত্যগৌরব আছে, সেই গৌরবের একবারে ধ্বংসসাধন সম্ভবপর নয়। পৃথিবীর মধ্যে কে কবে আপনার আভিজাত্যে বিসৰ্জন দিয়াছে ? আবুল ফজলের ন্যায় প্ৰতিভাশালী পণ্ডিতের মন্ত্রণায় পরিচালিত হইলেও, আকবর ভারতবাসীর আভিজাত্যগৌরবের মুলোচ্ছেদ করিতে পারেন নাই। মানুষের সম্বন্ধে যাহা ঘটিয়াছে, মানুষের অন্তর্নিহিত ভােব প্রকাশক ভাষার সম্বন্ধেও তাঁহাই ঘটিতেছে। ইউরোপের পরিবদ্ধনশীল ভাষার সহিত গ্ৰীক লাতিনের সম্বন্ধ বিচ্ছিন্ন হয় নাই। উর্দু, পারসী ও আরবীকে অবলম্বন করিায়াই ক্ৰমোন্নতিপথে অগ্রসর হইতেছে। শব্দবিদ্যাবিশারদ পণ্ডিতগণ নির্দেশ করিয়া থাকেন যে, পৃথিবীতে সংস্কৃতের তুল্য ভাষা নাই। সংস্কৃত সাহিত্যভাণ্ডার আজ পৰ্যন্ত পৃথিবীর প্রাচীন সাহিত্যভাণ্ডারের মধ্যে অপ্ৰতিদ্বন্দী হইয়া রহিয়াছে। ইহার অসামান্য শব্দবৈভব আছে, ইহার অপূৰ্ব্বভাব রাশি প্রতিমুহূৰ্ত্তে পাঠকের হৃদয় অমৃত্যুরসে অভিষিক্ত করিতেছে সৰ্ব্বোপরি ইহার অতুল্য সৌন্দৰ্য্য বিকশিত প্ৰভাতকমলের ন্যায় চিরকাল নবীনভাবে পরিপূর্ণ রহিয়াছে। এরূপ ভাষা যে ভাষার অবলম্বস্বরূপ হয়, সে ভাষাও ক্রমে উন্নত ও কমনীয় হইয়া থাকে। শ্যামলপত্রাবলী এবং প্রস্ফুটিত পুষ্পরাশি হইতে বিচ্যুত হইলে বৃক্ষ যেমন শোভাহীন হয়, সংস্কৃত শব্দসম্পত্তিতে বঞ্চিত হইলে বাঙ্গালা ভাষাও সেইরূপ শোভাশুন্য হইবে।