পাতা:সাহিত্য পরিষৎ পত্রিকা (প্রথম খণ্ড).pdf/১৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S$8 সাহিত্য-পরিষদ-পত্রিকা । [ মাঘ অক্ষরে মুদ্রিত হইতেছে বটে, কিন্তু উহার ভাব ও অর্থ কখনও বাঙ্গালা নহে। উহা ফিরিঙ্গী ভাবেরই অপূৰ্ব্ব বিকাশ মাত্র। ইংরেজীতে student life বলিবে আমাদের মনে সেই ভোগবিলাসপরিশূন্য, চিরবি শুদ্ধ ব্ৰহ্মচর্য্যের ভাবটি উদিত হয়। এখন student life এর বাঙ্গালা হইয়াছে ছাত্রজীবন। ঠিক অক্ষরে অক্ষরে অনুবাদ ! এই অপূৰ্ব্ব অনুবাদে আমাদের জাতিগত সেই অপূৰ্ব্ব ভাবটি ক্ৰমে দূরে সরিয়া পড়িতেছে। যে ভাবের পরিচিন্তানে আমাদের হৃদয় পবিত্রতায় পরিপূর্ণ হয়, যাহার আবির্ভাবে আমাদের শিক্ষা সৰ্ব্বাংশে সুশিক্ষা বলিয়া পরিগণিত হয়, যাহার পালনে আমাদের দেহ, মন ও আত্মার উন্নতি হইতে থাকে, যাহার অস্তিত্বে আমাদের জাতীয় ভাবের পরিপুষ্টি হইয়া থাকে, সেই চিরপবিত্ৰ, চিরমহিমান্বিত, চিরোৎকর্ষসুচক ভাবটি হইতে স্বলিত হইলে, আমাদের কি রূপ অধোগতি ঘটবে, তাহা ভাবিলেও হৃৎকম্প উপস্থিত হয়। এইরূপে “জীবনের প্রত্যুষ”, “সাহিত্যের উদ্যারাজ্য” প্রভৃতি কথাগুলি এখন বাঙ্গালী বলিয়া পরিচিত হইতেছে। শ্রদ্ধাস্পদ রাজনারায়ণ বাবুর প্রদশিত দৃষ্টা(ड्द्र (बड्.डी तान । শ্রেণীতে এগুলি ও নিবেশিত হইতে পারে । যাহার এইরূপ অনধিগম্য, অপূৰ্ব্ব শব্দসম্পত্তি দেখাইয়া, আপনারাই অপেন দিগকে চরিতাৰ্থ মনে করেন, অামাদের বিশ্বাস, তঁাহারা কখনও জাতীয় ভাষার মৰ্য্যাদা রক্ষা করিতে যত্ন করেন না। ফলতঃ যে সকল লেখক “বাবু বাঙ্গালা” লিখিয়া প্রকৃত বাঙ্গালীর উন্নতি করিতে চাহেন, তাহারা অভিজ্ঞ হইতে পারেন, বহুদৰ্শী হইতে পারেন, চিন্তাশাল হইতে পারেন, কিন্তু তঁহারা জাতীয় ভাষার চির স্তন রীতির রক্ষায় সমর্থ নহেন । উপস্থিত প্ৰবন্ধে যাহা উল্লিখিত হইল, তাহার তাৎপৰ্য্য এই যে, বহুলপরিমাণে সংস্কৃত, শব্দ থাকিলেই, বাঙ্গালা ভাষার উৎকর্ষ সাপিত হয় না। প্রয়োজন অনুসারে বাঙ্গালায় সংস্কৃত ও অসংস্কৃত, স্বদেশী ও বিদেশী, সকল শব্দেরই প্রয়োগ করা উচিত। সংস্কৃত শব্দের প্রয়োগকালে, সংস্কৃত ব্যাকরণের দে নিয়ম বাঙ্গালামু প্ৰচলিত রহিয়াছে, তাহা মানিতে হইবে । যে সকল শব্দে ভাষা শক্তিসম্পন্ন, সৌন্দৰ্য্যবিশিষ্ট, হৃদয়াকর্ষক ও সুবোধ্য হয়, সেই সকল শব্দের প্রয়োগের প্রতি দৃষ্টি রাখা কৰ্ত্তব্য। বাঙ্গালী রচনায় ফিরিঙ্গী ভাব সৰ্ব্বাংশে পরিত্যাগ করিতে হইবে। একবার বঙ্গদর্শনে ( বঙ্গদর্শন, যষ্ঠখণ্ড ) বাঙ্গালা ভাষা সম্বন্ধে একটি প্ৰবন্ধ প্ৰকাশিত হইয়াছিল । প্ৰবন্ধ লেখকের কোন কোন কথা উপস্থিত প্ৰবন্ধে উল্লিখিত হইয়াছে । যাহা হউক, প্রসঙ্গক্রমে এই স্থলে বঙ্গদর্শনের প্রবন্ধের কিয়দংশ উদ্ধত হইতেছে :- “ধিনি যত চেষ্টা করুন, লিখনের ভাষা এবং কথনের ভাষা চিরকাল স্বতন্ত্র থাকিবে । কারণ কথনের এবং লিখনের উদ্দেশ্য ভিন্ন। কথনের উদ্দেশ্য কেবল সামান্য জ্ঞাপন, লিখনের উদ্দেশ্য শিক্ষাদান, চিত্তসঞ্চালন। এই মহৎ উদ্দেশ্য হুতোমি ভাষায় কখনও সিদ্ধ হইতে পায়ে না । * * * ইহাই সিদ্ধান্ত হইতেছে যে, বিষয় অনুসারেই রচনার ভাষার উচ্চতা বা সামান্যতা নিৰ্দ্ধারিত হওয়া উচিত। রচনার প্রধান গুণ এবং প্রথম প্রয়োজন সরলতা এবং স্পষ্টতা। যে রচনা সকলেই বুঝিতে পারে, এবং পড়িবামাত্র যাহার অর্থ বুঝা যায়,