পাতা:সাহিত্য পরিষৎ পত্রিকা (প্রথম খণ্ড).pdf/১৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সন। ১৩০১ ] বাঙ্গালা রচনা ৷ , >१९ অর্থগৌরব থাকিলে তাঁহাই সৰ্বোৎকৃষ্ট রচনা। তাহার পর ভাষার সৌন্দৰ্য্য। সরলতা এবং স্পষ্টতার সহিত সৌন্দৰ্য্য মিশাইতে হইবে। অনেক রচনার মুখ্য উদ্দেশ্য সৌন্দৰ্য্য, সে স্থলে সৌন্দৰ্য্যের অনুরোধে শব্দের একটু অসাধারণত সহা করিতে হয়। প্রথমে দেখিবে, তুমি যাহা বলিতে চাও, কোন ভাষায় তাহা সৰ্ব্বাপেক্ষা পরিষ্কার রূপে ব্যক্ত হয়। যদি সরল, প্ৰচলিত * * ভাষায় তাহ সর্বাপেক্ষা সুস্পষ্ট এবং সুন্দর হয়, তবে কেন উচ্চ ভাষার আশ্রয় গ্ৰহণ করিবে ? * * যদি বিদ্যাসাগর বা ভূদেব বাবু প্ৰদৰ্শিত সংস্কৃতিবহুল ভাষায় ভাবের অধিক স্পষ্টতা এবং সৌন্দৰ্য্য হয়, তবে সামান্য ভাষা ছাড়িয়া সেই ভাষার আশ্রয় লাইবে। যদি তাহাতে ও কাৰ্য্য সিদ্ধ না হয়, আরও উপরে উঠিবে। প্রয়োজন হইলে তাহতেও আপত্তি নাই। নিম্প্রয়োজনেই আপত্তি । * * রচনাকে সৌন্দৰ্য্যবিশিষ্ট করিবে, কেননা যাহা অসুন্দর, মনুষ্যচিত্তের উপর তাহার শক্তি অল্প ।

  • * *ঃ ইহাই আমাদের বিবেচনায় বাঙ্গালা রচনার উৎকৃষ্ট রীতি। নব্য ও প্রাচীন, উভয় সম্প্রদায়ের পরামর্শ ত্যাগ করিয়া, এই রীতি অবলম্বন করিলে আমাদিগের বিবেচনায় ভাষা শক্তিশালিনী, শব্দৈশ্বৰ্য্যে পুষ্ট এবং সাহিত্যালঙ্কারে বিভূষিত হইবে।”

ফলতঃ, যে কোন রূপে হউক, ভাষার সৌন্দৰ্য্য ও ওজস্বিতা বৃদ্ধির জন্য চেষ্টা করিতে হইবে। স্থলবিশেষে চির প্রচলিত সরল শব্দ গুলি সংস্কৃত শব্দ অপেক্ষাও অধিকতর হৃদয়স্পৰ্শী হইয়া থাকে। বাবা, মা, বা ভাইরে বলিয়া সম্বোধন করিলে উহা যেরূপ হৃদয়স্পর্শী হয়, পিতঃ, মাতঃ বা ভ্ৰাতঃ বলিলে তদ্রুপ হয় না। যেস্থলে ওজস্বিতা বা বর্ণনাবৈচিত্ৰ্য প্ৰদশনের প্রয়োজন হয়, সে স্থলে অবস্থাবিশেষে সংস্কৃত শব্দ গুলিও অধিকতর হৃদয়াকর্ষক হইয়া থাকে। লেখক রুচিসম্পন্ন ও শব্দসম্পত্তিতে সমৃদ্ধ হইলে উপযুক্ত শব্দ বিন্যাস করিয়া ভাষার সৌন্দৰ্য সম্পাদনা করিতে পারেন। ভাষার সৌন্দৰ্য্য ও পারিপাট্য লেখকের ক্ষমতা ও কৌশলের উপরেই নির্ভর করে। প্রাদেশিক শব্দের প্রয়োগবিষয়ে একটু সাবধান হওয়া উচিত। বঙ্গদেশের এক প্রাদেশিক শব্দের সহিত অপর প্রাদেশিক শব্দের একতা নাই। সকল অঞ্চলের লোকেই আপনাদের চির প্রচলিত প্ৰাদেশিক শব্দ গুলির আদর করিয়া থাকে। এক প্ৰাদেশিক শব্দ অপেক্ষা অপর প্রাদেশিক শব্দ ভাল, এরূপ নির্দেশ করিবার কারণ দেখা যায় না। এখন পরস্পরসন্মিলন এবং আলাপপরিচয়ের সবিশেষ সুবিধা হওয়াতে এক অঞ্চলের লোক অন্য প্রাদেশিক । শব্দের অর্থ পরিগ্ৰহ করিতে পারিতেছে বটে, কিন্তু সময়ে সময়ে এবিষয়েও গোলযোগ উপস্থিত হয়। একবার আমাদের কোন আত্মীয় মরাই শব্দের অর্থ ঘরের বারেন্দা করিয়াছিলেন। আত্মীয়টি ইংরেজী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন ; কয়েক খানি গ্ৰন্থও রচনা করিয়াছেন। অন্য এক সময়ে একজন বন্ধু পেতে শব্দের অর্থ করিয়াছিলেন, পাতিয়া শুইবার জিনিষ । বলা বাহুল্য, বন্ধুটি গ্রন্থকার। গ্ৰন্থ রচনায় তাহার প্রতিপত্তিও আছে। সুশিক্ষিত ব্যক্তিও এইরূপে প্রাদেশিক শব্দ গুলির অর্থপরিগ্রহে অসমর্থ হইয়া থাকেন। বিদ্যালয়ে যে