পাতা:সাহিত্য পরিষৎ পত্রিকা (প্রথম খণ্ড).pdf/২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৬ সাহিত্য-পরিষদ-পত্রিকা । [४दर्भ যাহা হউক, এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিত যুবকদিগের পুরোভাগে অনন্ত জ্ঞােনরাজ্য প্রসারিত রহিয়াছে। অপরদিকে তঁহাদের মাতৃভাষার দরিদ্রভাব প্রত্যক্ষীভূত হইতেছে। র্তাহারা এখন এই দারিদ্র্য দূরীভূত করিতে বদ্ধপরিকর হউন। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাধিধারিগণ অপর ভাষা হইতে বিবিধ বিষয়ে জ্ঞানলাভ করিতেছেন, তথাপি তঁহাদের জাতীয় ভাষার অনাদর করা উচিত নহে। তঁর্তাহারা কখনও এই বলিয়া আত্মসমর্থন করিতে পারেন না যে, “আমরা যখন অন্য উপায়ে নানাবিষয় জানিতে পারিতেছি, তখন আমাদের জাতীয় ভাষার উন্নতিতে প্রয়োজন কি ?” এরূপ উক্তি নিরতিশয় অনুদারতার পরিচায়ক । দান্তে বা চসার মাতৃভাষার দারিদ্র্যদর্শনে কখনও তৎপ্ৰতি ঘূণাপ্ৰকাশ করেন নাই, এই দরিদ্রভাবই• তাহাদিগকে মাতৃভাষার উন্নতিসাধনরূপ মহৎকাৰ্য্যসাধনে প্ৰবৰ্ত্তিত করিয়াছিল। দান্তের পূৰ্ব্বে ইতালীয় ভাষা ওজস্বিতায় বা কোমলতায় গৌরবান্বিত ছিল না। ভাষার এইরূপ অসম্পূর্ণ অবস্থায় দান্তে জীবনের গুরুতর কৰ্ত্ত্যব্যসম্পাদনে সমুথিত হইলেন। একজন মাত্র লেখক একখানি মাত্ৰ কাৰ্যপ্রণয়ন করিয়া, সমগ্ৰ সভ্য সমাজকে দেখাইলেন যে, তাহার স্বদেশের ভাষা কোন বিষয়ে দরিদ্র বা কোন সময়ে অসম্পূর্ণ নহে । আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাধিধারীদিগেরও মনে রাখা উচিত যে, অল্প সময়ের মধ্যে র্তাহাদের ভাষা অনেক পরিমাণে শব্দ বৈভবে সমৃদ্ধ হইয়াছে, এবং ওজস্বিতীয়, উদ্দীপনায় ও কোমলতায় অপরাপর সভ্য জনপদের ভাষার সমকক্ষ হইবার চেষ্টা করিতেছে । এই ভাষায় যে সকল উৎকৃষ্ট কাব্য, উৎকৃষ্ট উপন্যাস, উৎকৃষ্ট ধৰ্ম্মতত্ত্বসংক্রান্ত গ্রন্থাদি প্ৰকাশিত হইয়াছে, তৎসমুদয় যে কোন উন্নতিশীল ভাষায় প্ৰকাশিত হইলে সেই দেশ ও সেই ভাষার গৌরবের বিষয় হইতে পারে। তঁহাদের স্বদেশীয়দিগের অবচ্ছিন্ন চেষ্টাতেই ভাষার এইরূপ অভূতপূৰ্ব্ব শ্ৰীবৃদ্ধি হইয়াছে। এখন তঁাহারাও স্বদেশীয়দিগের অনুগামী হউন। ইতিহাস সাক্ষ্য দিতেছে, জাতীয় ভাষার অবনতিতে কোন দেশ জাতীয়ভাবে অনুপ্রাণিত হইতে পারে নাই, কোন সমাজ উন্নতিসোপানে অধিরূঢ় হইতে সমর্থ হয় নাই, এবং কোন জাতি উৎসাহে অবিচলিত ও উদ্যমে অপ্ৰতিহত হইয়া, সজীবতার পরিচয় দিতে পারে। নাই। বিলাসে উপেক্ষা করিয়া, ভোগাভিলাষে বিসর্জন দিয়া, সংযতভাবে জাতীয় ভাষার পুষ্টিসাধন করিলে, যে অনন্তও অক্ষয় কীৰ্ত্তি প্রতিষ্ঠিত হইবে, তাহার সমক্ষে বিশ্বজয়া সম্রাটের বিশ্বব্যাপিনী বিজয়কীৰ্ত্তিও কিছুই নহে।