পাতা:সাহিত্য পরিষৎ পত্রিকা (প্রথম খণ্ড).pdf/৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জাতীয় সাহিত্যের আবশ্যকতা কি ? সাহিত্য জাতিপ্ৰসূত লিপিবদ্ধ চিন্তারাশি হউক, অথবা জাতিবিশেষের লিখিত মনোভাবই হউক, সাহিত্য সংসারের একটি অত্যাবশ্যক বিষয়। সাহিত্য মানবের সমক্ষে অন্তর্জগতের দ্বার উদঘাটিত করিয়া দিতেছে। সাহিত্য লোকস্থিতির পক্ষে মহাশক্তিরূপে এবং লোকোন্নতির পক্ষে প্ৰবলসহায়ারূপে মানব সমাজের শত প্রকার কল্যাণ সাধন করিতেছে,-এবং সাহিত্য দেশের ব্যবধান ও কালের ব্যবধান অপসারিত করিয়া দিয়া মানবসমাজে জ্ঞানের সাৰ্ব্বভৌমিকত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠিত করিয়া রাখিয়াছে। এখন দেখা যাটক, জাতীয় সাহিত্যের কিছু আবশ্যকতা আছে কি না ? আমি বিবেচনা করি, জাতীয় সাহিত্য বুৎপত্তির পথপরিস্কারক। অধীত বিদ্যার উপরে স্বীয় অধিকার স্থাপনার নাম বুৎপত্তি, কিংবা যে শক্তিতে অধীত বিদ্যাকে যথেচ্ছরূপে প্রচলিত ও ব্যবহৃত করিতে পারা যায়, তাহার নাম বুৎপত্তি। এই বুৎপত্তি জাতীয় সাহিত্যের আলোচনাব্যতিরেকে সহজে লাভ করা যায় না । আমাদের দেশের বালি - কেরা বাঙ্গালী বিদ্যালয়ে প্রবিষ্ট হইয়া পাঁচ ছয় বৎসরের পরিশ্রমে ইতিহাস, ভূগোল, গণিত ও অপরাপর বিষয়ে যেরূপ জ্ঞান অর্জন করিয়া থাকে, ইংরাজি বিদ্যালয়ে প্রবিষ্ট হইয়া পাঁচ ছয় বৎসরের মধ্যে ইতিহাস ভূগোলাদি বিষয়ে সেইরূপ জ্ঞান কোন রূপেই লাভ করিতে সমর্থ হয় না। কারণ স্বদেশীয় ভাষায় লিখিত পুস্তকের অন্তর্নিহিত জ্ঞান বালকের মনে সহজেই যেরূপ অঙ্কিত হয়, বিদেশীয় ভাষায় লিখিত পুস্তকের অন্তর্নিহিত জ্ঞান সহজে সেরূপ মুদ্রিত হয় না। এ কথা একদিকে যেমন ঠিক, অপর দিকে সেইরূপ এ কথাও ঠিক যে,-স্বদেশীয় সাহিত্যের আলোচনা বালকের চিত্তে এরূপ যোগ্যতার সঞ্চার করিয়া দেয়, যদ্বারা বালকচিত্ত ভবিষ্যতে বিদেশীয় সাহিত্য ও বিদেশীয় শিক্ষা সহজেই আয়ত্ত করিবার পক্ষে অনুকুল ও অধিকারী হইয়া উঠে। এই কারণ বশতঃ দেখিয়াহি,-এতদেশীয় ইংরাজী শিক্ষিত-মণ্ডলীর মধ্যেই দেখিয়াছি,-যাহারা স্কুলে বা কলেজে পঠদ্দশায় পদে পদে শিক্ষক বা অধ্যাপকের নিকট প্রশংসার পাত্ৰ হইয়াছেন, এবং অবশেষে সকল পরীক্ষায় পারদর্শিতার সহিত উত্তীর্ণ হইয়া শিক্ষিত