পাতা:সাহিত্য পরিষৎ পত্রিকা (প্রথম খণ্ড).pdf/৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

न् s७०S] জাতীয় সাহিত্যের আবশ্যকতা কি ? NOS নার ইচ্ছানুরূপ জ্ঞানরত্ব লাভ করুক, এবং লব্ধ জ্ঞান হইলে পিতৃ-পিতামহাদির মত হালচালনাতেই জীবনযাত্ৰা নির্বাহ করুক । সুতরাং জ্ঞান ও ধৰ্ম্মকে সংসায়ের সকল অংশে প্ৰতিষ্ঠিত করিতে হইবে । তাহা করিতে হইলে জাতীয় সাহিত্যের আলোচনা একান্ত আবশ্যক। আমি দৃষ্টান্তস্বরূপ উল্লেখ করিতেছি যে,-বাঙ্গালা দেশে কৃত্তিবাস ও কাশীদাস এবং উত্তর-পশ্চিম প্রদেশে ইতিহাসকীৰ্ত্তিত কবি তুলসীদাস নিয়শ্রেণী:স্থ লোকদিগের চরিত্রের উন্নতি ও জ্ঞানের বিকাশপক্ষে যে অত্যাশ্চৰ্য্য কাৰ্য্য সাধন করিায়াছেন, তাহার তুলনা মানবজাতির সাহিত্যের ইতিহাসে আতি অল্পই দেখিতে পাওয়া যায়। আমি দেখিয়াছি,-পণ্যবিক্রেতা পণ্যশালায় উপবিষ্ট হইয়া হস্তস্থিত তুলাদণ্ডের সাহায্যে ক্রেতাকে সামগ্ৰীবিক্রয় করিতেছে,-আর মহাভারত-পাঠ-নিযুক্ত পুরোহিতের দিকে মুখ ফিরাইয়া জিজ্ঞাসা করিতেছে,—“যুধিষ্ঠির কি করিলেন ?” পুরোহিত তদুত্তরে বলিলেন-“তার পর যুধিষ্ঠির অমুক কৰ্ম্ম করিলেন।” তখন পণ্যবিক্রেতা, ঈষৎ হাস্যের, সহিত বলিল—“তা ত তিনি করিবেনই,-তিনি যে ধৰ্ম্মপুত্র”। এইরূপ বলিয়া বাঙ্গালার এক জন সামান্য মুদি বা পণ্যবিক্রেতা যুধিষ্ঠির-চরিত্রের সামঞ্জস্য রক্ষা করিতেছে। আমি দেখিয়াছি,-পল্লীগ্রামের প্রান্তরে পূমপাননিরত কৃষকেরা হলচালনা করিতেছে, আর লক্ষণের জ্যেষ্ঠ-প্ৰীতি বা জ্যেষ্ঠভক্তির কথা আলোচনা করিয়া বিস্ময়ে এক এক বার স্তস্তিত হইতেছে। আমি দেখিয়াছি,-উত্তরপশ্চিমাঞ্চলে সামান্য নারীগণ পৰ্য্যন্ত সুগভীর কুপ হইতে জলোত্তোলন করিতেছে,--আর সতীকুল-শিরোমণি সীতাদেবীর বনবাস ও অগ্নিপরীক্ষার প্রসঙ্গ উত্থাপিত করিয়া জলোত্তোলনজনিত শ্ৰান্তির শান্তি করিতেছে। আমি দেখিয়াছি,-বিপুল-কলেবর বেগবতী সরযুর তটে দণ্ডায়মান হইয়া দেখিয়াছি,-অযোধ্যার নিরক্ষর লোকেরা পৰ্য্যন্ত সরযুবারি স্পর্শ করিয়া একদিকে কৃতাৰ্থ হইতেছে, অপরদিকে সেই অতুলকীৰ্ত্তি কবি তুলসীদাসের অমৃতসিক্ত গাথায় রঘুবীর রামচন্দ্রের অমানুষিক পিতৃভক্তির কথা কীৰ্ত্তন করিতেছে। ভারতের পূর্বে ও পশ্চিমে, উত্তরে ও দক্ষিণে, সকল প্রদেশে সকল স্থানে রাম ও লক্ষণ, সীতা ও সাবিত্রী প্রভৃতি যেন একান্ত আত্মীয় ব্যক্তির ন্যায় গৃহীত ও সমাদৃত হইতেছেন। ভারতে এমত গৃহ নাই,—যে গৃহে রামচন্দ্র বা যুধিষ্ঠিরের চরিত্ৰমাহাত্ম্য আলোচিত না হয়, ভারতের এমন নারী নাই,-যে নারীর কণ্ঠে সতীত্বের সাক্ষাৎ-মূৰ্ত্তিীরূপিণী সাবিত্রী বা সীতাদেবীর কথা কীৰ্ত্তিত না হয়। রামচন্দ্রের অলৌকিক সত্যনিষ্ঠা, যুধিষ্ঠিরের অদ্ভূত ক্ষমা, এবং সীতা ও সাবিত্রীর অভাবনীয় পতিপ্ৰাণত বাঙ্গালার আপামর সাধারণ সকল শ্রেণীর মধ্যে এত সাধারণ হইয়া পড়িল কিরূপে ? বাঙ্গালীর জাতীয় সাহিত্য না থাকিলে,- অবিনশ্বর-কীৰ্ত্তি কৃত্তিবাস ও কাশীদাস আবিভূতি না হইলে, এই অমূল্য আদর্শনচয় কখনই সৰ্ব্বসাধারণের সমক্ষে প্ৰতিভাত হইতে পারিত না। আমি বিশ্বাস করি,-শত bউপদেশে, শত বক্তৃতায়, শত ধৰ্ম্মমন্দিরের দ্বারোদঘাটনে বাঙ্গালীর যাহা হয় নাই ।