পাতা:সাহিত্য পরিষৎ পত্রিকা (প্রথম খণ্ড).pdf/৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 সাহিত্য-পরিষদ, পত্রিকা । [थां६१ এই সুমধুর কথাগুলি কেবল মধুসূদনের জীবনের ইতিহাস নহে,-সেই সময়ের বঙ্গদেশের জাতীয় ইতিহাস। সেই সময়ে শিক্ষিত ধীশক্তি-সম্পন্ন সকলেই পরাধন-লোভে মত্ত হইয়া ভিক্ষাবৃত্তি আচরণ করিয়া অনেক ভ্ৰমণ করিয়াছিলেন, কিন্তু অবশেষে ঘরে আসিয়া পৈতৃক ধন পাইয়াছিলেন। কিন্তু সত্ৰমণ, সে ভিক্ষাবৃত্তি ব্যর্থ হয় নাই। পাশ্চাত্য শিক্ষা আমাদিগের পক্ষে ফলশূন্য হয় নাই। পাশ্চাত্য উদ্যম ও উৎসাহ আমাদিগের পক্ষে মূল্যবান। সেই শিক্ষাবলেই আমরা নিজের ধন চিনিতে পারিয়াছি, সেই উৎসাহ বলেই আমরা পৈতৃক রত্ন আহরণ করিতেছি। এই সুফলটী শতাব্দীর চরম ফল,- এই সুফলটী বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থে সম্পূর্ণ রূপে পরিপক্কতা লাভ করিয়াছে। পাশ্চাত্য শিক্ষা লাভ করিয়া দেশীয় ভাষা ও দেশীয় বিদ্যার অনুশীলন, পাশ্চাত্য উৎসাহের সহিত স্বদেশের উন্নতি ও ঐক্যসাধন, পাশ্চাত্য জ্ঞান লাভ করিয়া কায়মনঃপ্রাণ দেশের জন্য সমর্পণ করা,-এইটী আমাদের শতাব্দীর শেষ ফল,-এইটী বঙ্কিমচন্দ্রের প্রতিভায় পূর্ণ বিকশিত হইয়াছে। সামান্য অনুকরণশীল ব্যক্তি ও বঙ্কিমচন্দ্রের ন্যায় লোকের মধ্যে প্ৰভেদ এই ;-পাশ্চাত্য জ্ঞানে তঁহার মন পুষ্টিলাভ করিয়াছে, অজীৰ্ণতা-ক্ষুব্ধ হয় নাই। জ্ঞানরত্ন সকল স্থান হইতেই আহরণীয়,-বঙ্কিমচন্দ্ৰ সকল দেশ, সকল স্থান হইতে সেই রত্ন আহরণ করিয়া তাহার নৈসৰ্গিক প্ৰতিভা আরও সমুজ্জ্বল করিলেন। সে প্রতিভার ফল কি, তাহা আমরা গত ত্রিংশৎ বৎসর ক্রমান্বয়ে দেখিয়াছি । যখন দুৰ্গেশনন্দিনী প্ৰকাশিত হইল, তখন যেন বঙ্গীয় সাহিত্যাকাশে সহসা একটিী নূতন আলোকের বিকাশ হইল। দেশের লোক সে আলোকচ্ছটায় চমকিত হইল, সে বালার্ককিরণে প্ৰফুল্ল হইল, সে দীপ্তিতে স্নাত হইয়া স্তুতিগান করিল। কলিকাতা ও ঢাকা, এবং পশ্চিম ও পূৰ্ব্বদেশ হইতে আনন্দরব উথিত হইল,বঙ্গবাসিগণ বুঝিল সাহিত্যে একটি নূতন যুগের আরম্ভ হইয়াছে, একটি নূতন ভাবের স্বষ্টি হইয়াছে,-নূতন চিন্তা ও নূতন কল্পনা বঙ্কিমচন্দ্ৰকে আশ্রয় কন্দিয়া আবির্ভূত হইয়াছে। বঙ্গীয় গদ্য-সাহিত্যে দুৰ্গেশনন্দিনীর ন্যায় পুস্তক পুৰ্ব্বে দৃষ্ট হয় নাই। সেরূপ মৌলিকতা, সেরূপ কল্পনার কমনীয় লীলা, সেরূপ সৌন্দৰ্য্য ও লাবণ্যচ্ছটিা, সেরূপ মধুময়ী রচনা ও গল্পের চাতুৰ্য্য বঙ্গীয় গদ্যসাহিত্যে পূৰ্ব্বে দৃষ্ট হয় নাই। বীরেন্দ্ৰ সিংহ, জগৎ সিংহ ও ওসমানের দুর্দমনীয় তেজ ও বীরত্ব, প্রখরা বিমলার চাতুৰ্য্য ও জগদ্ধিমোহিনী কমনীয়তা, শান্তিময়ী আয়েসার প্রগাঢ় নিঃশব্দ হৃদয়ভাব, গড়মন্দারণ, দেবমন্দির, কতলুর্থার গৃহে উৎসব,-এ সকল চিত্ৰ অভাবনীয়, অচিন্তনীয়, অবিনশ্বর । কল্পনাসাগর মন্থন করিয়া মহারথী বঙ্কিম এই অমৃত বঙ্গসাহিত্যে প্রবাহিত করিলেন,-বঙ্গবাসিগণ সে অমৃতসাগরে ভাসিল । নিন্দুকগণ নিন্দার তান তুলিলেন। দুর্গেশনন্দিনী বিদেশীয় ভাবে পুর্ণ, বঙ্কিম বাবু