পাতা:সাহিত্য পরিষৎ পত্রিকা (প্রথম খণ্ড).pdf/৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

मैश সাহিত্য-পরিষদ, পত্রিকা । [কাৰ্ত্তিক লিখিত না হইয়া মুখে মুখে প্রচারিত হইত ; সেই জন্য সামবেদের শতাধিক শাখা, যজুর্বেদের সহস্ৰ শাখার উৎপত্তি হয়। কৃত্তিবাসী রামায়ণেও ঐরূপে পাঠান্তর এবং প্ৰক্ষিপ্তের সৃষ্টি হইয়াছে । এই লেখক।াণুর হস্তকগুতি বড় ভয়ঙ্কর। ইহা হইতেই প্রক্ষিপ্তের উৎপাতের আবির্ভাব । ইহার কাছে কোন প্রাচীন কবিরই ক্ষমা নাই। বাল্মীকি, ব্যাস, কালিদাস, বিদ্যাপতি, চণ্ডীদাস, কাশীরাম, কোন কবির গ্রন্থ প্রক্ষিপ্তসমাবেশশুন্য ? লেখক।াণুর আশঙ্কা ( এই আশঙ্কা নিতান্ত অমূলকও বলা যায় না) যে, তাহার নামে গ্ৰন্থ প্রচারিত হইলে উহা কেহ পড়িবে না। এই জন্য তিনি লোকসমাজে সমাদৃত সুকবির রচনার মধ্যে আপন রচনা ডুবাইয়া রাখেন। কীটাণু যেমন ফুলের অভ্যন্তরে লুকাইয়া থাকিয়া ফুলের সাহচৰ্য্যফলে দেবতার অঙ্গে স্থান লাভ করে ; লেখিকাণুও সেইরূপ সুকবির কাব্যে - প্ৰচ্ছন্ন থাকিয়া কাব্যামোদীর নিকট আদর প্রাপ্ত হয়েন । আর যদি স্বীয় রচনা গ্ৰন্থান্তরে প্ৰক্ষেপ করিতেই হয়, তবে বাঙ্গালী লেখক।াণুর পক্ষে রামায়ণের মত লোকায়াত গ্রন্থের লোভ সংবরণ করা বড়ই কঠিন। ফলে, র্তাহারা এই লোভসংবরণ করিতে পারেন নাই । এই জন্যই কৃত্তিবাসী রামায়ণে প্ৰক্ষিপ্তের এত উৎপাত । উপরে যে অপপাঠের বাহুল্য, পাঠান্তরের সমাবেশ এবং প্রক্ষিপ্তের উৎপাতের কথা বলা হইল, তাহা কেবল কৃত্তিবাসী পুথির অসাধারণ দুর্ভাগ্য নহে । মুদ্রাব্যন্ত্রের আবিষ্কারের পূর্বে সকল গ্রন্থেরই ঐ রূপ দুৰ্দশা ঘটিত । কিন্তু ইহার পর যে আধুনিকতার আবরণ, সংস্কৃতের প্রলেপ, অঙ্গবৈকল্য ও অবয়বহানির আলোচনা করিতেছি, তাহা অল্প কবিরই ভাগ্যে ঘটিয়াছে। কৃত্তিবাসের অদৃষ্ট বড় সুপ্ৰসন্ন। অৰ্দ্ধ শতাব্দী পূর্বে এই কলিকাতা মহানগরীতে জয়গোপাল তর্কালঙ্কার নামে এক মহাত্মার আবির্ভাব হয়। তর্কালঙ্কার মহাশয়ের কিছু কবিত্বশক্তিও ছিল। এই শক্তিই কৃত্তিবাসের কীৰ্ত্তিাহরণের সহায় হইয়াছে। তর্কালঙ্কার মহাশয়ের এইরূপ ধারণা হইয়াছিল“কৃত্তিবাসের রচনা বড় গ্ৰাম্য শব্দে দুষ্ট, বড়ই অশুদ্ধ, ভাবের অনেক স্থানে অসংলগ্নতা রহিয়াছে”। এই ধারণার বশে আর বটতলানিবাসিনী দুষ্ট সরস্বতীর প্ররোচনায় জয়গোপাল সংস্কৃত অভিধানের সাহায্যে কৃত্তিবাসী রামায়ণের অপ্রচলিত ও প্রচলিত গ্ৰাম্য শব্দের সংস্কার করেন । সঙ্গে সঙ্গে কৃত্তিবাসী পয়ারের অক্ষরের নুনাধিক্য,অযথা মাত্রা এবং অস্ত্যম্বরের অমিল ংশোধিত হয়। এই সংস্কার ও সংশোধনের ফলে, “কোথাও দুই পংক্তি, কোথাও দশ ংক্তি, কোথাও পৃষ্ঠাকে পৃষ্ঠা, কোথাও দুই দশ পৃষ্ঠা, এবং কোন কোন স্থানে পুস্তকের বিষয়কে বিষয় পৰ্য্যন্ত পরিত্যক্ত হইয়াছে।” আর পরিবর্তনের কথা কি বলিব । এমন কোন এক পদ প্রায় নাই, যাহাতে কিছু না কিছু পরিবাৰ্ত্তন লক্ষিত না হইবে। এইরূপে সংশোধিত রামায়ণ প্ৰকাশিত হয় ; সংস্কৃতের প্রলেপময়, আধুনিকতার