পাতা:সাহিত্য পরিষৎ পত্রিকা (প্রথম খণ্ড).pdf/৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Գ8 সাহিত্য-পরিষদ-পত্রিকা । { কাত্তিক তাহারও প্ৰতিবিধান করা চাই । ভিন্ন ভিন্ন প্ৰদেশ হইতে সংগৃহীত কয়েকখানি পুথি মিলাইলে অপপাঠের প্রতীকার সহজেই করা যাইতে পারে । কিন্তু নিঃসংশয়রূপে পাঠাস্তরের মীমাংসা করা সকল স্থলে সম্ভবপর নহে। আয়াস ও অধ্যবসায়ের সহিত অনেক গুলি পুথি মিলাইয়া দেখিলে এ বিষয়ে যে কতক পরিমাণে সিদ্ধি লাভ করিতে পারা যাইবে, সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নাই । কিন্তু শেষে অমীমাংসিত পাঠান্তরও স্থানে স্থানে স্বীকার করিতে হইবে। সকল প্ৰাচীন কাব্যেই এরূপ করিতে হইয়াছে ; ব্যাস, বাল্মীকি, হোমর, কালিদাস, দান্তে, সেক্ষপীয়র-কোন কবির কাব্যে পাঠান্তর স্বীকার করিতে হয় নাই ? কৃত্তিবাসী রামায়ণের পক্ষে এইরূপ হওয়ায় কিছু বিচিত্র হইবে না । শেষে লেখক।াণুর হস্তকণ্ড তি, যাহা হইতে প্ৰক্ষিপ্তের উৎপাত,-তাহার সবিশেষ প্ৰতিবিধান করিতে হইবে । এই প্ৰতিবিধান অতি দুরূহ ব্ৰত, কিন্তু একবারেই অসাধ্য ভাবিবার কোন কারণ নাই। সকল কবির রচনার একটা তান, একটা বিশেষত্ব আছে । সে তান সেই কবিরই, অন্য কবির নহে। যেমন হস্তাক্ষর ; আপনি যতই লিখুন, যেমন লিখুন—লেখার ছাঁচ একই থাকিবে ; সে ছাঁচ আপনার ভিন্ন অন্য কাহারও নহে। যদি আপনার অনেক লিপিপত্ৰাদি দেখিয়া থাকি, আপনার হস্তাক্ষরে যদি আমার অভিজ্ঞতা হইয়া থাকে, তবে একশত লোকের হস্তাক্ষরের মধ্যে আপনার হস্তাক্ষর চিনিয়া লইতে পারিব । রচনা সম্বন্ধেও এইরূপ, যদি কোন কবির রচনার অনেক আলোচনা করা যায়, যদি সেই রচনার সহিত আমার সবিশেষ পরিচয় হইয়া থাকে, এক কথায় যদি সে রচনায় আমার অভিজ্ঞতা থাকে ; তবে অবশ্যই শত কবির রচনার মধ্য হইতে সেই রচনা বাছিয়া লইতে পারিব। বাঙ্গালা ভাষার ও বাঙ্গাল কাব্যের যে অপরিণত অবস্থায় কৃত্তিবাস রামায়ণ রচনা করেন, তাহার ছায়া অবশ্যই কবির কাব্যে সুপ্ৰকাশ আছে। গ্ৰাম্য শব্দ ও ভাব, ছন্দের অসামঞ্জস্য এবং ব্যাকরণের প্রত্যয়াদির ভিন্নতা- এ সকল লক্ষণ কৃত্তিবাসের রচনায় প্রস্ফুট আছে। পরবর্তী প্ৰক্ষেপকারীর রচনা ঐ সকল লক্ষণবিরহিত ; অতএব। কৃত্তিবাসের রচনা হইতে বিভিন্ন। কৃত্তিবাস লিখিয়াছেন, — ‘‘আন আউদড় আগল” ; প্ৰক্ষেপকারী লিখেন,-“অন্য আলু থালু পুতুলী”। কৃত্তিবাস লিখিয়াছেন—“কান্দিতে কান্দিতে রামের ফুলিল দুই অাখি” ; প্ৰক্ষেপকারী লিখেন—“বারি ঝরে কমললোচনে ৷” কৃত্তিবাস লিখিয়াছেন—“সাগরের পার সীতা রাহেন অশোকবনে । ধাইয়া ঘরে আইলা রাম হাতে ধনুক বাণে ॥* প্ৰক্ষেপকারী লিখেন। ‘সীতা ধ্যান সীতা জ্ঞান সীতা চিন্তামণি। সীতা বিনা যেন আমি মণি হারা ফণি ॥” কৃত্তিবাস লিখিয়াছেন- ‘সীতা সমপিন্ন ভাই তোমার তরে”; প্ৰক্ষেপকারী লিখেন—“সীতা সমৰ্পিনু তোমারে” ইত্যাদি। অপেক্ষাকৃত আধুনিক প্রক্ষিপ্ত ভাগ এইরূপে ধরা যাইতে পারে ; কিন্তু ঐ সকল লক্ষণের সাহায্যে প্রাচীন প্ৰক্ষেপকারীর লিপিচাতুরী ধরা যাইবে না। উহার সম্বন্ধে