পাতা:সাহিত্য পরিষৎ পত্রিকা (প্রথম খণ্ড).pdf/৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

R সাহিত্য-পরিষদ-পত্রিকা । [কাৰ্ত্তিক অগত্যা বাধ্য হইয়া একটা শব্দ কখন কখন পাচটা অর্থে ব্যবহার করিতে হয় । অগত্যা বটে, তথাপি ইহা ভাষার নির্ধনতাসূচক । আবার একটা অর্থে কখন পাচটা শব্দও ব্যবহৃত হইয়া থাকে ; ইহা অবশ্য নির্ধনের ধনপ্রদর্শনের আড়ম্বর। এই আড়ম্বর না থাকিলে ভাষার বাহসৌষ্ঠব, আকার, বসন, ভূষণ প্রভৃতির একটু হানি হইত, কিন্তু তাহার অস্থি মজ্জা মাংসপেশী সবল ও সমর্থ থাকিত সন্দেহ নাই। যাহা চাউক, সংসারে নিধনেও ধনের বড়াই করিতে যায় ; ভাষাও অনেক স্থলে আসল জায়গায় ভাবপ্রকাশে অসমর্থ হইয়াও অনাবশ্যক স্থলে বাগাড়ম্বর বাচালতা প্ৰকাশ করিতে ছাড়ে না । তৰে জ্ঞানরাজ্যে ভূমিকৰ্ষণ করিতে গিয়া সেখানে কৃষিযান্ত্রের পারিপাট্য ও সৌষ্ঠব অপেক্ষা উহার কাৰ্য্যকারিতার উপর অধিক পরিমাণে দৃষ্টি রাখিতে হয়। মৃত্তিকা সেখানে বড়ই দৃঢ়, এবং সেখানে এমন যন্ত্র প্রয়োগ করিতে হইবে, যাহাতে সেই শক্ত মাটি আঘাত মাত্র বিচূৰ্ণিত হয়। কবিতা ও বক্তত হইতে একটু দূরে থাকিয়া যখন শুদ্ধ নিরেট জ্ঞানের বিস্তার ও বৃদ্ধির দিকে লক্ষ্য করিতে হয়, তখন ভাষার সম্পূর্ণতার দিকেই বেশী দৃষ্টি রাখিতে হইবে ; ভাষার অযথা সমৃদ্ধি প্রদর্শনের আবশ্যকতা থাকিবে না; অর্থাৎ ভাষার যাহা উদ্দেশ্য, সেই উদ্দেশ্য যত পূর্ণভাবে সাধিত হয়, তাহাই লক্ষ্য রাখিতে হইবে । তোমার প্রতিবাসীকে যদি ঠিকাইবার অভিপ্ৰায় না থাকে, যদি তাহাকে প্রকৃত সরল ভাবে কোন নূতন লব্ধ জ্ঞানের অধিকারী করিবার বাসনা থাকে, তবে হেঁয়ালির ছন্দে কথা কহিও না। দ্ব্যর্থ শ্লেষ ত্যাগ করিয়া স্পষ্ট ভাবে পরিষ্কার ভাষায় কথা কহিও । 莺 জ্ঞানের ভাষা বা বিজ্ঞানের পরিভাষা গঠনের সময় এই কয়টি কথা মনে রাখিতে হইবে । যে শব্দটি উচ্চারণ করিবে, তাহার যেন একটি নির্দিষ্ট বাধাৰ্বিাধি, সীমাবদ্ধ, স্পষ্ট, হেয়ালিস্তত্বহীন অর্থ থাকে। একটি নির্দিষ্ট শব্দ একটি নির্দিষ্ট অর্থে ব্যবহার করিবে, সেই শব্দটি আর দ্বিতীয় অর্থে ব্যবহার করিবে না, এবং সেই অর্থে দ্বিতীয় শব্দের সৃষ্টি করিবে না, এই হইল বৈজ্ঞানিক পরিভাষার মূল সুত্র। এই মূল সুত্রে দৃষ্টি রাখিয়া ভাষা প্ৰণয়ন করিলে ভাষার যাহা মুখ্য উদ্দেশ্য, অর্থাৎ তাহার সাহায্যে জ্ঞানের বিস্তারতাহা সুচারুরূপে সম্পাদিত হইবে । কোন গোলযোগ বা আপদ উপস্থিত হইবে না । সে কালের লেখকদের মধ্যে,--বিশেষতঃ কবিগণের মধ্যে অনেকের দুই অর্থবিশিষ্ট বা বহু অর্থবিশিষ্ট বাক্য রচনা করিয়া ক্ষমতা জাহির করিবার বিশেষ ঔৎসুক্য দেখা যায় । ইহাতে লেখকের পরাক্রমপ্রকাশ এবং পাঠকের নিগ্ৰহ ভিন্ন অন্য ফল বড় দেখা যায় না । রাঘবপাণ্ডবীয় লেখকে আমরা কুস্তিগির মল্লযুদ্ধব্যবসায়ী পালোয়ান মাত্ৰ দেখিতে পাই, কিন্তু সে বীরত্বে জগৎ সংসারের বড় কিছু আসে যায় না । সর্বদা লেখকের দোষ দেওয়া যায় না । অনেক সময় পাঠকের হস্তে লেখককে নিগৃহীত হইতে হয়। ভাগবত-ব্যাখ্যাত কোন শ্লোকের বত্রিশ রকম ব্যাখ্যা দিয়া বাহবা