পাতা:সিমার - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোলোকবাবুদের দিয়ে গেছেন । গোলোকবাবুর সাধের সিঁদুরে গাছে ওই দুর্ঘটনার পর কী এক দুর্জেয় কারণে বউল আসা বন্ধ হয়ে গেল। মুকুল ধরে না । গুটি হয় না। পর-পর দুই বছর এইরকম হল । ধীরে-বীরে কথা উঠল-গাছে শাপ লেগেছে । অপয়া বউ পেটের বাচ্চা মেরেছে । গাছকে করেছে বন্ধ্যা । গাছ ভয় পেয়ে বোল দিচ্ছে না। কথাটা নানারকম গলায় নানান সুরে খেলিয়ে-খেলিয়ে বলা হতে থাকল। বেশির ভাগ সময় গোলোকবাবুর স্ত্রী পাশের বাড়ি থেকে ওই কথা পাচার কবতেন, গলা বাজিয়ে শিরিনকে অভিসম্পাত দিতেন । বলতেন—আমাদের কেষ্টপুরের বাগানে একবার কাঁঠাল চুরি হল । সোনামুখী গাছ গো । সে কি কাঁঠাল ! কোয়া দেখে চোখ ধরে যায় । জোয়ালের সমান সাইজ। চুরি করল এক মুসলমান ছিচকে, নাফর শাহু নাম । শালা ছুচকি চাের। অমাবস্যায় চুরি তো । গাছ ডরিয়ে গেল। আর ফল দিলে না। ওইভাবে চুরি হলে গাছের সতীত্ব চলে যায়। গাছেরও তো প্ৰাণ আছে। মান অভিমান আছে। আমার সিঁদুরি গাছটার সেই হাল করল ওই অপয়া মেয়ে । গাছের বুকে ডর ধরিয়ে দিয়েছে। এইভাবে দোষারোপ চলত । নানা সুরে কথা পল্লবিত হত। বউল আসার সময় হলে বাগানের পরিচযার বহর বেড়ে যেত। গোলোকবাবু নল উচিয়ে পাম্প মেশিনে ওষুধ স্প্রে করতেন বউলের পুঞ্জে-পুঞ্জে । সিঁদুরি গাছের কাছে গিয়ে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকতেন । মাসি জানােলা খুলে সেই দৃশ্য দেখতেন । একবার গাছের তলায় ঘট প্রতিষ্ঠা করে তেলসিঁদুর-পাতাপল্লব দিয়ে পূজা দেয়া হল। ঢাক বাজানো হল । মন্ত্র পড়ে মুসলমানের গাছের হিন্দুত্বপ্রাপ্তি ঘটানো হল। বাবা সেইসব দেখে খেপে উঠলেন । গাছ বিক্রি হয়ে গেল বটে, কিন্তু গাছের চারা তাঁর বাপের হাতে লাগানো । তিনি সহ্য করতে পারলেন না । দাদাজী বেঁচে থাকলে কষ্ট পেতেন ভেবে বাবা কষ্ট পেতে থাকলেন । একদিন গোলোকবাবুর সাথে ওই নিয়ে বিবাদ হয়ে গেল। গোলোকবাবু তলে-তলে নিখিলবিশ্ব হিন্দু পরিষদের সদস্য হয়েছেন। মা দুঃখ পেয়ে বাবাকে বললেন-ওদের গাছ ওরা যা খুশি করুক, তুমি ঝগড়া করছি কেন ?-বাবা রেগে গিয়ে বললেন-ওদের গাছ ? কে বলেছে। ওদের গাছ ? আকবাজী নিজে হাতে ওই গাছ বহাল করে গেছে । ওইরকম ঢোল বাজালে আকবাজী কবরে শুয়েও শান্তি পাবে না। আকবাজীর রুহু (আত্মা) কতখানি কষ্ট পায় তুমি জান ? মা বললেন-বাউল ধরে না বলে ওরা ঢাক বাজায় । পুজো দেয়। আমরাই তো দোষ করেছি। শিরিন কেন ওই গাছে দড়ি দিতে গেল ? বাবা-মায়ের তককােতকুকি আমি আর মাসি দাঁড়িয়ে-দাঁড়িয়ে শুনছিলাম Sos