পাতা:সিমার - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

--বেশ । তাই বলুন । শিরিন সম্মত হলেন । সাদিক তখন এতক্ষণ বাদে একটা সিগারেট ধরিয়ে ধুয়ো ছেড়ে বললেন-লিলি পুরুষকে ঠিক সহ্য করে না। বইতে পারে না । গাইডের কথার মধ্যে এইরকম একটা ইঙ্গিত ছিল । তাই না ? আবার একটা টান দিলেন উনি । সিঁড়ির দিকে এগোলেন । সিঁড়ির দিকে পা বাড়িয়ে থেমে গিয়ে বললেন-ইউরোপের দেশগুলোর মতন, আমেরিকার মতন, এদেশেও মেয়েদের একশ্রেণীর মধ্যে একটা ট্রেনড় দেখা যাচ্ছে। সেটা ফিমেল লিব নামে চলছে। মেয়েরা তাদের নিজেদের মধ্যে একটা সর্পিল যুদ্ধ, প্রচণ্ড আগ্নেয় নারীসত্তাকে শ্রদ্ধা করতে চাইছে। স্বাধীনতার একটা তুমুল কনসেপট বলা যায় । সেটা ঠিক কিনা জানি না। হয়তো নয়। কারণ সেই ক্ষোভ, নিজেকে সম্পূর্ণ এক রক্তাক্ত জীবন-পিণ্ডে পরিণত করা এবং পুরুষকে দলিত করার ইচ্ছে, যৌন-দাসত্ব থেকে মুক্ত হয়ে যৌনতার স্বাধীন উচ্ছাস পেতে চাওয়ার অভিপ্ৰায়, এই আন্দোলনের মধ্যে জড়িয়ে গেছে। কিন্তু মেয়েদের জৈব বৈশিষ্ট্য আর দেহের নারীলক্ষণগুলোর মধ্যেই রয়েছে তার চিরকালের অপমান । তা সেইসব কথাগুলো ঐ শিবপুর গার্ডেনে গিয়ে লিলিকে দেখে আমার হঠাৎ মনে পড়ে গিয়েছিল । আমার খুব ভালো লেগেছিল, ওই বিরাট গোলপাতা, সেই রক্তাক্ত ফুল, বেশ প্রতিবাদী, পুরুষ-বাচ্চাদের ডুবিয়ে দেয়। নেয় না। বলতে বলতে সাদিকুল হাে-হাে হেসে উঠলেন । হাসতে-হাসতে সিঁড়ি ভেঙে নীচে নেমে চলে গেলেন । ზiš তারপর থেকে শিরিনের সত্যিকার তুমুল যুদ্ধ শুরু হল । একদিন মাঝরাতে ঘর ছেড়ে বাইরে এলেন । আমাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে বললেন-চলো । সিঁদুরি গাছকে সাদিকের কথাগুলো বলে আসি । আমি চমকে উঠলাম। সাদিক তো মজা করে গল্প বলে গেছেন । হতভাগিনী সেইসব গল্পকে সত্যি মনে করেছেন । সাদিকের কথার এত দাম দিতে হয় ? আমি যেতে রাজি না হলে একাই এই অন্ধকারে চলে যেতে চাইলেন । অগত্যা আমাকেও যেতে হল । এই অবস্থায় গোলোক-পত্নী দেখলে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বেধে যাওয়ার কথা। ভয়ও হচ্ছিল খুব । গাছের কাছে নতজানু হয়ে পাগলের মতন বিড়বিড় করতে লাগলেন শিরিন । ওঁর কেমন নিশির দশা হয়েছিল । Yo