পাতা:সিমার - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

95 শিরিন-মাসির কথা বলতে গেলে আমায় অনেক টুকরো টুকরো দৃশ্যের আশ্রয় নিতে হয়। একদিন স্কুল থেকে ফিরে মাসির সাথে সিনেমায় যাওয়ার প্রোগ্রাম । বাড়ি ফিরে দেখলাম, মাসি কোলের ওপর বোরকা ধরে উদাসীন চেয়ে আছেন জানালার শূন্যতায় । সেজেছেন মাসি। কানে দুল। পায়ে আলতা । নাকে সাদা পাথরের ফুল। গলায় চিকনহার। তার ওপর এখন বোরক চাপাতে হবে । শাড়িখানাও বেনারসি। সব বৃথা । সব সৌন্দর্য অন্ধকারে ঢাকতে হবে । দেখে বড় মায়া হচ্ছিল । অথচ আমার বেলা বোরকার কোনো আবশ্যকতা নেই। এর কারণ বুঝতে পারতাম। একদিন নিশিপিসির বাড়ি বেড়াতে গিয়েছিলাম সবাই মিলে । বাবাও সাথে ছিলেন । সাধারণত আত্মীয়ের খানাপিনাতেও শিরিনকে সাথে নেওয়া হত না । বাড়িতে এক বুড়ি দাসীর হেফাজতে তাঁকে রেখে যাওয়া হত । সেদিন কী মনে করে ওঁকেও নেওয়া হয়েছিল । বাসে যাচ্ছি। আমরা । আমরা বসেছি মেয়েদের আসনে । শিরিন আছেন সাব-শেষ প্ৰান্তে একজন মহিলার পাশে । কিছুক্ষণ বাস চলার পর পাশের মহিলা বোরকার পাশে থেকে উঠে স্টপে নামলেন। জায়গাটা খালি ছিল বলে একজন পুরুষ শিরিনের পাশে বসে পড়লেন। সাথে-সাথে বাবা পুরুষ-আসন ছেড়ে উঠে এসে লোকটিকে বললেন-আপনি যান, আমার সিটে গিয়ে বসুন । লোকটি বেকুফ হয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন-ঠিক আছে, আমি আর বসব না । লোকটি রড ধরে দাঁড়িয়ে রইলেন । বাবা শিরিনের পাশে আগলে জেকে বসলেন । আমার চোখ মুখ লাল হয়ে উঠেছিল । আমার ছোটাে ভাই বেশ বড়ো হয়েও মায়ের দুধ খেত বলে বাবার নির্দেশ ছিল, দুধ খাওয়ানোর সময় বাচ্চার দুহাত পেছনে যেন দড়ি দিয়ে বেঁধে দেওয়া হয় । নইলে ছেলে মায়ের বুকে হাত দেবে । এই দৃশ্য শিরিনও দেখেছেন । প্রথম যেদিন দেখেন সবাঙ্গ শিহরিত হয়েছিল তাঁর । অস্ফুট বলেছিলেন-হায় । কী নিষ্ঠুর । দুধের বাছাও মায়ের শরীর স্পর্শ করতে পায় না । এ কোথায় এলাম। আমি ? এ তোমরা কোথায় পাঠালে, মা ! ভাইয়া গো ! ७ 6कान् भून्निध्र ! শিরিন-মাসিবোরকা-কোলে বসে ছিলেন । আমায় দেখে ঝরঝর করে কেঁদে ফেললেন । নিঃশব্দ সেই কান্না । কোনো শব্দ নেই, একটু অনুকার অদি। খানিক পর শক্ত হয়ে বললেন-আমি যাব না, মিনু । তুমি এক যাও । বলে উনি ক্যানের দুল খুলে ফেললেন ড্রেসিং টেবিলের বড়ো কাঁচের আয়নার সামনে টুলে বসে। গলার হার শাড়ি ইত্যাদি সবই খুলতে থাকলেন । আজও YSR