পাতা:সিমার - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভালোমতন করে তাঁর চোখে চাইতেই উনি গাঢ় স্বরে কেঁপো-কেঁপে উঠলেন-পুরুষের এই মন নিয়ে আমি কী করব বলে দে, মিনু। তুই বলে দে । বলতে বলতে মাসি বিছানায় ভেঙে পড়লেন । দুহাতে খামচে ধরলেন বিছানার চান্দর। উপুড় হয়ে বুকের সাথে কী যেন আকড়ে ধরতে গিয়ে পারলেন না । মাথার চুল বিপর্যন্ত হয়ে সামনে ঝুলে পড়ল। চােখে শুকনো কান্নার খিন্ন কালিমার ছাপ ভিজে উঠছে মাত্র কোনোমতে । কণ্ঠস্বরে কী কষ্ট ঝরিছে, কী নিষ্ঠুর চাপা খেদ ঘুলিয়ে উঠছে, বোঝাতে পারব না। পাগলের মতন বলছেন ; আহা রে দুলদুলি ঘোড়া জোর করো থোড়া থোড়া যেতে হবে টুঙ্গির শহর । दी আমি সাদিকের জন্য বিকাল অবধি অপেক্ষা করিনি । চলে এসেছিলাম । সারা রাত ছটফট করেছি । আমার কষ্ট দেখে মা এসে বিছানার কিনারে বসে ছিলেন। মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছিলেন । বারবার শুধিয়ে ছিলেন-কী হয়েছে । আমি কোনো উত্তর দিতে পারিনি । আমার অবস্থা দেখে মায়ের চোখে মুখে আশ্চর্য অপরাধের ছাপ জেগে উঠেছিল। এই ভাবে একটা-একটা দিন কেটে গেল । আগামী কাল রায় বেরুবে আদালতে । আজ এই বাড়িতে আমি একা হয়ে যাব । মা চলে যাবেন গাঁয়ের বাড়ি । বাবাও তৈরি হচ্ছেন মাকে টেনে তুলে দেবেন, তাই। দাড়িতে আতর মাখছেন । ঢেঁকীটােয় পান সাজিয়ে নিচ্ছেন। চোখে খুশির উজ্জ্বল স্রোত হাওয়ার মতন কাঁপছে। আমি দিনের বেলায় দুঃস্বপ্ন দেখে কেঁদে উঠলাম। দেখছিলাম, আমি একটা ছোট্ট টি-টি পাখি আকাশপথে একলা উড়ে যাচ্ছি। অবধিহীন আকাশের পথে আমি বড়ো একা । আমি চিৎকার করে ডেকে যাচ্ছি মানুষকে । ঘুমন্ত নগরী, গাছপালা-প্রান্তর ঘুমিয়ে। কেউ আমার কান্না শুনছে না। বুকের তলায় বুদবুদ করছে ভয় । প্রবল এক ভয়ের তাড়নায় বুক আমার ভেঙে যাচ্ছে। ভয়েই কেঁদে উঠে জাগলাম। বিকাল হয়ে এসেছিল। হঠাৎ কী মনে করে চোখে মুখে জল দিয়ে চা খেয়ে শাড়ি বদলে বাইরে পথে একলা হাঁটতে শুরু করলাম । মা জানালেন, চলে যাবেন উনি । বাপ-মেয়ে একসাথে থেকে বলে ভালো থাকার শুভেচ্ছা জানালেন । মায়ের চেহারা কী করুশ দেখাচ্ছিল, মুখটা এতটুকু হয়ে গেছে। বারবার আমার চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলেন। আমি রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছিলাম। পেছনে চেয়ে NAVO