পাতা:সিমার - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

একটু বাদে দরজা খুলে গেল। সামনে বাবা দাঁড়িয়ে । হাতে গোঁফ ছাঁটার কাঁচি । আমাদের দেখে ভেতরে পাশের ঘরে চলে গেলেন । খাটে শিরিন । সেদিকে চেয়েই বুকের ভেতরটা ধ্বক করে উঠল। পরনের কাপড় একপায়ে হাঁটু আদি উঠে আছে। বুকের ব্লাউজ মেঝোয় পড়ে। ছেড়া। বুকের ওপর গলার কাছে কাপড় জড়ো করা । গলায় ছেড়া দাগ । গাল নখরে বিক্ষত । ঘুমন্ত কিনা বোঝা যাচ্ছে না। বোধহয় চােখ তোলারও ক্ষমতা নেই। একটু পর কাতর খুব অস্ফুট একটা শব্দ বেরুল গলা থেকে । সাদিকুল একটু কুঁকলেন । আমিও আরো কাছে এগিয়ে এলাম । ডাকলাম-খালামা ! কোনো সাড়া পেলাম না । পায়ের দিকে একটু সরে যেতেই খালামা মৃদু নাড়া খেলেন নিজেরই মধ্যে। আমি সাদিকুলের মুখের দিকে দৃষ্টি ফেলে দেখলাম, তাবৎ মুখ কেমন সংকুচিত, রেখাময় । থুতনি ঝুলে গেছে। বাবা এসে হঠাৎ পায্যের কাপড় টেনে নামালেন । কোনো কথা বললেন না । আবার পাশের ঘরে গেলেন, আবার এলেন । আমাকে বললেন-আজই আমরা বিকালে বাড়ি চলে যাব । তোমার ছোটােমাকে নিয়ে একসাথে যেতে হবে । তুমি এখন এখানেই থাকে । আবার চলে গেলেন পাশের ঘরে । আমি সেই মারাত্মক চিঠিখানি হাতের মুঠোয় ধরে আছি। সাদিকুল ডাকলেন অস্পষ্ট গলায়-শিরিন । আর একুবার। আর একবার তুমি পালিয়ে আসতে পার না ? খালামা চোখ তোলার চেষ্টা করতেই চোখের পাতা থারথার করে কেঁপে গেল। সাদিকুল একটা ঢোঁক গিললেন । তারপর কোনো কথা না বলে সহসা তীরের মতন বেগে ঘর ছেড়ে সিঁড়ি টপকে নেমে গিয়ে রাস্তায় পড়লেন । রিকশায় উঠে পড়লেন । আমি চিৎকার করে সাদিকমামাকে ডাকতে গিয়ে দেখলাম, গলায় কোন শব্দ ফুটছে না। আমার হাতের মুঠোয় সেই মারাত্মক চিঠি নিঃশব্দে পড়ে রইল প্ৰতিবাদহীন । CISG সেই থেকে শিরিন-মাসি বিছানায় শুয়ে থাকেন। দিনরাত্রির অধিকাংশ মুহুর্ত । তাঁর মনের মধ্যে চিন্তার তরঙ্গ আছড়ে পড়ে সামুদ্রিক জলোচ্ছাসের মতন । কিন্তু বাইরে সেই ক্ষুব্ধ তরঙ্গায়িত সমুদ্রের কোনো পরিচয় ফুটে ওঠে না। শুধু চিন্তারই কিছু ক্ষয় তাঁকে তলে-তলে পিষে ফেলে মানুষের একটি প্রায় সমাহিত আকৃতির মধ্যে জগৎ থেকে নিবসিত করে দেয় । একটি রক্তাক্ত জীবনপিণ্ড স্থবির হয়ে S8S