পাতা:সিমার - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কি, লাঠি নিয়ে চলো । সাথে সাথে সুখবাসের ব্যাপ-চাচারাও মক্তবমুখো ছোটে । সুখবাসও একখানা লাঠি হাতে ছুটে আসে। ঘটনাস্থলে এসে দেখে চারিদিক থেকে ভিড় করে গিয়াসজীকে গোল ক’রে ঘিরে ফেলেছে। ওরা । টানাটানি চলছে । গিয়াসজী নাকি চুনতীকে উলঙ্গ করতে চেয়েছিলেন । এর আগেও নাকি এমন ঘটনা ঘটতে গিয়ে ঘটেনি। আজ শালোয়াব-কামিজ ছিল বলে রক্ষে ! সুখবাসীরা এসে পড়ায় উত্তেজনা কিঞ্চিৎ থেমে আরো বেড়ে যায়। সুখবাসের লাঠি গিয়ে সইফুল্লার মাথায় আছড়ে পড়ে । অন্য কারো হাতে লাঠি ছিল না । সাইফুল্লার দলের হিম্মৎদার সুখবাসের মতন প্ৰকাণ্ডদেহী দু’চারজন আছে, উনিশ বিশ । তারা নিরন্ত্র। ফলে সইফুল্লার সামান্য রক্তপাত হয়। অদম্য সিমারের লাঠির বিজলি ঘাত সকলকে অপ্রস্তুত ক’রে দেয়। ঘটনা আরো উত্তেজক হয়ে ওঠে । কিন্তু তৎক্ষণাৎ বেশিদূর গড়ায় না। সুখবাসরা ফিরে আসে। গিয়াসজীকে সাথে ক’রে টেনে আনে। অতঃপর সইফুল্লা কড়া সিদ্ধান্ত করে, মিটিং ক’রে গিয়াসজীকে বরখাস্ত করবে । সুখবাস হাতের চিরকুট দেখিয়ে বলে-ঘটনা ভেন্ন ! আমার শ্বশুর নিদোষী । সমাজের দুটি ভাগ স্পষ্ট হয়ে যায়। অন্যান্য দেশের (গ্ৰাম )মাতব্বাররা জড়ো হয়ে বিচার বসায় । তাকে বাইশী সভা বলে । বাইশখন গ্রামেব মানুষ যোগ দেয় সেই বিচার সভায় । সেই বিচারে একটি দিন ধার্যকরা হয় । উক্ত দিন এই ধরনের জনসমাবেশের মধ্যে মসজিদে উঠে গিয়াসজী কোরান হাতে ক’রে বলবেন-চুনতীকে তিনি স্পর্শ করেননি। মৌলবীর চরিত্র সম্পকে সন্দেহ দেখা দিলে মাদ্রাসা টিকবে না। কারণ, অধিকাংশই মেয়েছেলে ছাত্রী । এক সপ্তাহ বাদে সেই দিনটি ধার্য করা হয় । মক্তব। আবাস থেকে বিতাড়িত গিয়াসজী সুখবাসদের বৈঠকে আশ্রয় নিয়ে চলে আস্পেন । তাঁর ঘাড় সেই যে নিচু হয়ে গেল, তিনি আর কারো সামনে স্পষ্ট করে মুখ তুললেন না । মনে হতো সব সময় তিনি ঢুলছেন। প্রায়ই চোখ মুদে থাকতেন । যেন কী সব তিনি ধ্যান করতেন বোবার মতন । সেই নির্দিষ্ট ধার্য দিন এল। সেইদিন সুখবাস বাড়ির নতুন বলদ জোড়া জুড়ে দৌলতডিহির ক্ষেতে গিয়েছিল ধান আনতে । ভেবেছিল দুপুর নাগাদ ফিরবে। আছরের নামাজের (বিকাল বেলার নামাজ) পর মসজিদে উঠবেন গিয়াসজী । কোরান হাতে করে কসম করবেন, চুনতীকে তিনি স্পর্শ করেননি। কোনো গোলমালও হয়ত হতে পারে। ভেবেছিল সুখবাস । এইসব ভাবনার চাপে তার মাথা গরম হয়েই ছিল । কাদাপীক ঠেলে, গাড়ি ঠেলে আনতে হয়েছিল । গায়ে RR