পাতা:সিমার - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সহসা লণ্ঠন হওয়ার ধাক্কায় নিভে যায় । নিভে যাওয়ার আগে মাটিতে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়োয়ানকে মুহুর্তে কেমন চেনা মনে হয়। গিয়াসজীর । চকিতে মনে হয়, কিন্তু বিশ্বাস হয় না। ভাবেন, তিনি ভুল দেখছেন । নাম ধরে ডাকবেন। কিনা বুঝতে পারেন না । তিনি প্রবল আকুতি মিশিয়ে বলেন-চলো বাবা । আর মাত্র একক্রোশ পথ । বায়েন তালাক এখনো হয়নি । তুমি সেটা শুনবে । ওরা তো পালিয়ে গেল । শোনার ভয়ে পালালো । সাক্ষীর ভয়ে পালালো। তুমি শুনবে ! তুমি সাক্ষী থেকে । বায়েন তালাকে এক সাক্ষী, নাকি কোনো সাক্ষী নেই। বাপরে । কিছুই যে বুঝছি না। আসমানের ফেরেস্তা দেখছে, আমার ছেলে মদিনাকে স্পর্শ করেনি। আঘাত করেনি। সুখবাসকে বলবে তুমি । গিয়ে বলবে জাহেদা বেঁচে আছে । আমার মেয়ে মরেনি । বলবে তো ? গাড়োয়ান ? হাহাকার করে ওঠেন গিয়াসজী । দ্রুত আয়াত পড়তে থাকেন। মদিনা ফেটে কেঁদে ওঠে। ঠিক তখনই সুখবাস অদ্ভুত বিকৃত ভয়াবহ গলায় কেঁদে ওঠে অন্ধকারে । পুরুষের বিকৃত গলায় কান্না চেনা যায় না। চরাচর কী অসম্ভব কালিমায় ভরে আছে। গিয়াসজী সচকিত প্রশ্ন করেন-কে তুমি বটে ? গাড়োয়ান কান্না থামিয়ে উত্তর করে-আই ডোন্ট নাে। তারপরই হাে হাে ক’রে হেসে ওঠে। হেসে উঠেই অন্ধকারে ছুটে যায়। হাসতে হাসতে কেঁদে ফেলে এবং নিজেকেই প্রশ্ন করে-কে বটে তুমি ! নিজেই উত্তর দেয়-আই ডেন্ট নো । তারপর ছুটতে শুরু করে । ধোঁকায় । হাঁপায় । থামে। প্রশ্ন করে । উত্তর দেয়। এবং থামে না । ছোটে । ছুটতে থাকে। পাগল সুখবাস নিঃসীম গহন অন্ধকারের অস্তিত্বে দ্রুত ধাবমান এখন । ঈশা গাড়ি ছেড়ে দেয় । বাকি ক্রোশ শেষে শুধায়-তালাক দিব চাচা ? গিয়াসজী কড়া গলায় জবাব করেন-না । দিও না । গাড়ি চলতে থাকে। মদিনা ঈষৎ ব্যাকুল গলায় ডুকরে কাঁদে । তখন আয়াতের সুরকে মনে হয় শোক-সংগীত । একটি অন্ধকারের পারাবার পার হতে থাকে গাড়ি । দিক-চিহ্নহীন । ●●