পাতা:সিমার - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বললাম, ঠিক জানি নে । কী হলে আপনার উপকার হয় বলুন ? তিনি বললেন, এতে আমার বিশেষ কোনো উপকার নেই। উপকার তোমার বন্ধুর । হামিদুলের দিকে চেয়ে দেখলাম, সে কেমন কাতর চােখে আমার দিকে চেয়ে আছে । ভিখারি। যেমন মানুষের করুণার দিকে আকুল হয়ে চেয়ে থাকে । রুস্তম বললে, তুমি যদি নাস্তিক হও, আমরা তবে ফিরে যাব । যদি মুসলমান হও আমার বোন রাবেয়াকে আমি তোমার সাথে নিকে দিয়ে তিন মাসের জন্য তোমার হাতে সঁপে দিয়ে যাব । রাবেয়া পাশের ঘর থেকে এ ঘরে এসে দাঁড়িয়েছে । তার চোখে জল টলটল করছে । সে কথা বলল, নাকি কেঁদে উঠল, বোঝা যায না । বললে, ঐ মুর্থ আমায় জোর করে তালাক দিয়েছে মামুন । তোমার মতো নাস্তিক হলে, ওর তালাক খাটত না । চেয়ে দেখলাম, হামিদুলের মাথা নিচু হয়ে বুকের উপর ঝুলে পড়েছে । আমি ভালো করে রাবেয়ার দিকে চেয়ে দেখতে পারলাম না। শুধু কিছুক্ষণ নিম্পন্দ দুর্গ থেকে বললাম, শুনলেন তাে খতিৰ সাহেব, বাবেয়া বলছে, আমি খতিব সাহেব বললেন, সে কথা শিকদারও বলেছে। কিন্তু এ কথাও বলেছে, তুমি নাস্তিক কিন্তু নিমকহারাম নও । তোমাকে মানুষ বিশ্বাস করে । ঘাড় তুলে হামিদুল আকুতি-ভরা চােখে আমার পানে তাকালো । মুহুর্তে মনের মধ্যে তোলপাড় করে গেল। মাথার মধ্যে সমস্ত কোষগুলি নিস্তেজ হয়ে যেতে লাগল। একজন মুসলমান অধ্যাপকের সমস্ত রুচি এবং সুস্থ সংস্কারের বৃত্তিবোধে চুড়ান্ত ঘা লেগে চৈতন্যের ভূ-ভাগ জোর প্রকম্পনে আন্দোলিত হতে লািগল । হামিদুলের দিকে চেয়ে দেখতে ঘূণা বোধ হচ্ছিল । রাবেয়ার শুকনো-সজল মুখে চোখে চেয়ে অন্তরাত্মা শিউরে শিউরে উঠছিল, তার করুণা-পীড়িত মুখচ্ছবি দেখতে দেখতে মনে হলো, নিজেকে যদি মুসলমান বলি, এর চেয়ে লজ্জাজনক পরিচয় সভ্য মানুষের কাছে আর কিছু নেই। কিন্তু আমার এ সময় নাস্তিক হয়ে ধর্মদ্রোহিতারও কোনো মানে হয় না। এভাবে রাবেয়াকে তার দুর্গত বিপন্ন জীবন থেকে রক্ষণ করা যায় না । নেমকহারাম নই, অকৃতজ্ঞ নই, এই সত্যেৰ উপর বিশ্বাস করে যে হামিদুল আমারই শরণাপন্ন, তাকে কি লাথি মেরে ফেরাতে পারি ? জীবনে কখন কবে ছেলেবেলায় ধমানুরাগে বশীভুত ছিলাম, তা যেন আজ মধ্যযুগের স্মৃতি, বিবৰ্ণ তৈলচিত্রে বাঁধানো । VIS