পাতা:সিমার - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গণতান্ত্রিক শিক্ষাদীক্ষায় লালিত যে মানুষ, তার জন্য এ-রকম শাস্তি আর হাদিসী জুলুম কত যে পীড়াদায়ক এ-সময় হামিদুল নিশ্চয় উপলব্ধি করতে পারবে না। ধর্মশাস্ত্রে আমার ঘোর উন্নাসিকতার দুনািম গাজীপুরে এক সময় আন্দোলন তুলেছিল । আশা করি, কেউ তা বিস্মৃত হয় নি । আজ যে হাদিস আদিমযুগের কুসংস্কারের ডিপো হয়ে উঠেছে, তার নিগড়ে আধুনিক সভ্য-মন বাঁধা পড়তে পারে না । অথচ এ বাঁধন আজ অক্টোপাসের মতোই আমাকেও জড়িয়ে ফেলতে উদ্যত হয়েছে। কেমন ভয় পেয়ে আমি সহসা গর্জে উঠলাম, এ যে সাংঘাতিক পাপ ! প্ৰচণ্ড ভণ্ডামি খতিব সাহেব । হামিদুল বললে নিচু স্বরে, হ্যাঁ, আমি ভণ্ড, মামুন ! এ তো আমারই পাপ । তুই প্ৰায়শ্চিত্ত করে দে ভাই ! খতিব সাহেব বললেন, হামিদের পাপ, তোমার পুণ্য মামুন । শুধালাম, আর রাবেয়ার কী ? বললেন, তার দুভাগ্য ! বদনসীব : রাবেয়া ডুকরে কেঁদে উঠল । হামিদুল অবরুদ্ধ গলায় বলে উঠল, তুই তো রাবেয়াকে একদিন ভালোবেসেছিলি মামুন ! বিয়ে করতেও চেয়েছিলি। তোর সাথে বিয়ে হলে আজ তার আর এই দশা হতো না । রাবেয়া আরো জোরে ফুপিয়ে কেঁদে উঠল । রুস্তম চেচিয়ে উঠল, তুমি থাম তো হাদিম । আর অন্ত আদিখ্যেতা দেখিও না । অন্যায় করেছ, সে কথা ঢাক পিটিয়ে না বললেও চলবে । হামিদুল কেমন বিহ্বল হয়ে চুপ করে গেল। আস্তে আস্তে তার মাথাটা ফের বুকের উপর ঝুলে পড়ল । বাইরে বৃষ্টির দাপট কিঞ্চিৎ স্তিমিত হয়েছিল। আবার চেপে এল । বললাম, হ্যাঁ হামিদুল, ভালোবেসেছিলাম। সেই খুব ছেলেবেলায়, আমরা তিনজনে কতদিন বর-কনে খেলেছি। একদিন তুই আমার শ্বশুর হয়ে রাবেয়াকে মেয়ে বানিয়ে আমার হাতে সঁপে দিয়েছিস তো, অন্যদিন আমাকে তোর শ্বশুর। হতে হয়েছে। কতদিন এই বিয়ে-বিয়ে খেলতে গিয়ে তোর সাথে মারামারি করেছি, মনে পড়ে ? হামিদুলের নিশ্চয়ই মনে পড়ছিল। বললাম, শ্বশুর হওয়ার চেয়ে বর হওয়াতেই আমরা বেশি সুখ পেতাম । সহজে কেউ মেয়ের বাপ হতে চায় ? তোর গায়ে জোর বেশি, তুই পর পর দু-তিন দিন বর হয়ে আমায় জোর করে শ্বশুর করে দেওয়াতে আমার মন খারাপ 8○