পাতা:সিমার - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কিন্তু যে আম-পেয়ারা আধোক খেয়ে তোর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলতাম, খাস নে মামুন, ধরে থাক । গাছ থেকে আরো দুটি ডাঁসা পেড়ে আনি, মনে আছে তোর ? তুই কখনো তাতে দাঁত বসাতে সাহস পাস নি। কিন্তু আজ কি তোকে তেমন করে কোনো কিছু ধরে রাখতে বলতে পারি মামুন ? বললাম, নারীও মানুষ হামিদুল, আমি পেয়ারার মতো ভোগের পণ্য শুধু নয় । এই কথাটা তোকে বলতেও এখন আমার ঘেন্না হয় । যা, তুই আমার চোখের সামনে থেকে চলে যা । পাষণ্ড ! জানোয়ার ! হামিদুল এমন-এক শুকনো হাসতে হাসতে বিদায় নিল, যার কোনো বর্ণনা দেওয়া মুস্কিল, মানুষকে আমন অপদাৰ্থ কঙালের মতো হাসতে কখনো দেখিনি । রাবেয়া সারা রাত পাশের ঘরে বিছানায় লুটিয়ে পড়ে আর মুখ তোলোনি । অন্য ঘরে, কখন যে আমি ঘুমিয়ে পড়েছি বুঝতে পারিনি । এইভাবে আমাব ফুলশয্যার বাদল রাত্রি কেটে গেল । ভোরে উঠেই প্রথম মনে পড়ল, রাবেয়া গত রাত্রে না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়েছিল । দুই রাত্রি হয়তো তিনটে নাগাদ আমি জেগেছিলাম। নিদেন দুটাে আড়াইটা তো বটেই। কেমন এক দিশাহীন উত্তেজনা, বিহ্বল আত্মপীড়ন অনুভব করেছি। মনে হয়। গত রাত্রিটা দুঃস্বপ্ন-কবলিত প্রেতিচ্ছায়ার অভিনয় মাত্র, অথচ যা ছায়া শুধু নয়। মানুষের কাছে এই ঘটনা-অভিনয় বিশ্বাসযোগ্য করে তোলাও কত-না মুশকিল । সাধারণ অশিক্ষিত গ্ৰাম্য মানুষের ধর্মীয় কুসংস্কারলালিত জীবনে প্ৰত্যহ যে নাটক অভিনয় হয়, আমি সে নাটকের নায়ক হতে পারি বলে কখনো কল্পনাও করিনি । কলেজ-লাইফে তালাক প্রথার বিরুদ্ধে কত-না যুক্তি এবং তথ্যপূর্ণ প্ৰবন্ধ রচনা করেছি। রেডিও-তে কলকাতা থাকার সময় কথিকা পাঠ করেছি। সব আজ কেমন অবিশ্বাস্য মনে হয় । গ্রামের কথায় আছে এক পাপী পাপ করে, হাজার পাপী পুড়ে মরে ! হামিদুলের পাপ আমায় দগ্ধ করল । কিন্তু শুধু কি তাই ! আমার মনে কি রাবেয়ার জন্য আকৈশোর এক দুঃসহ লোভ মনের মধ্যে তৃষ্ণা এবং ভালোবাসার ছদ্মবেশে ঘাপটি মেরে এতদিন জর্জরিত করেনি ? কত নারীর সান্নিধ্য এ জীবনে সম্ভব হয়েছে, কিন্তু তাতে কি 8V