পাতা:সিমার - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কাঁদছে । ডেকে তুললাম। তাকে । বললাম, খেতে দাও । রাত হযেছে ! রাবেয়া উঠে বসে বাচ্চাবেলার মতো ফুপিয়ে কেঁদে চোখ রাগড়াতে রাগড়াতে বিছানা থেকে নেমে গেল, তার গায়ের অচল মেঝোয় লুটিয়ে পড়েছিল, লুটিয়ে টেনে নিয়ে চলল সে । চোখ-মুখ ধোয়া-টােয়ার জল-শব্দ শুনলাম। তার পর রাবেয়া ডাকল, এস । কেমন কড়া গলায় ডেকে উঠল। সে । এ গল্পের পরিণাম আগেই কি লিখে ফেলেছি ? বোধ হয় গল্পটা শেষ থেকেই শুরু করেছি। আবার মনে হয়, এ গল্পের শুরু শেষ কিছুই নেই। যেখানে শেষ করি, সেখানেই গল্প সমাপ্ত হয়ে যায় । এর পরই যদি লিখি, তার পর তিন মাস বাদে হামিদুল এসে রাবেয়াকে টাঙ্গায় তুলে নিয়ে গাজীপুর রওনা দিল, তবে কি গল্প শেষ হয় না ? হামিদুল এবং রাবেয়া তার পব সুখে শান্তি এবং সাবধানতায় সংসার করতে লাগল, আমিও কলেজ করতে এবং ডক্টরেট লাভের থিসিস লিখতে লাগিলাম । কেবল মনে হলো, এই কয় মাস, ৯০টিা দিন আমি এক দাম্পত্য জীবনের অনবদ্য বিলাস ও সুখ সমারোহে কাটালাম । মানুষ কি ভাববে, আমি ভুল লিখছি ? মানুষ আমার কাছে যে আচরণ আশা করেছিল, আমি কি তার অন্যথা করেছি ? মনের মধ্যে কোনো কোনো মানুষের, যারা ঠিক লেখাপড়া শিখে মানুষ হতে চেয়েছে, রুচিধর্মের বালাই যাদেব মনের আঙিনা পাহারা দেয়, তাদের মনে গণ্ডি কেটে রাখা রয়েছে, সীতার মতোও তাদের মতিভ্ৰম হওয়ার জো নেই । রুচি, শিক্ষা, বিবেক, মনুষ্যত্ব, প্ৰেম-গ্ৰীতি, করুণা, মানবিকতা সবই যেন এক একটি গণ্ডির দাগ । তাকে অতিক্রম করে শাস্ত্রের দোহাই দিয়ে রাবেয়াকে স্বামীর সম্পূর্ণ ভোগে অনুরাগে, দাবি দাপটে উত্যক্ত কি কবা যায় না ? আমি কি বলতে পারি নে, নিয়তিই সীতার সর্বনাশ করেছে, এই নিয়তিবাদের বিরুদ্ধাচরণ করতে পাবি নি। তাই ইদতের ষোলকলা পূর্ণ হয়েছে। রাবেয়া বা আমার, কারো কোনো (झाष छिल •ा ! মানুষ কি বলবে ? জগতের কাছে আমার কথাগুলো কেমন শোনাবে ? আমি যখন কলেজে গিয়ে ছাত্রদেব হিউম্যানিজম, রজার বেকন, কমিউনিজম, লেনিনের নাম দিয়ে বর্তমান পৃথিবীর সভ্যতার অগ্রগতির কথা বলব, যখন আমি শেকসপীিয়রের মার্চেন্ট অব ভেনিসের গল্প শুরু করব এবং যখন বলব শ্ৰীকান্ত রাজলক্ষ্মীর কথা, বড় প্রেম কাছেই টানে না, দুরেও ঠেলে ইত্যাদি, তখন আমার আপন বিবেক রুচিধর্মের কাছে আমার কি কৈফিয়ত থাকবে ? 岔°