পাতা:সিমার - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মন কি বলে উঠবে না, বন্ধু তোমায় বিশ্বাস করে তার স্ত্রী এবং স্বপ্ন ভালোবাসা এবং বিশ্বাসকে রক্ষা করতে দিয়ে গেছে, তুমি তার সব কিছুই লুট করলে কেন ? রাবেয়া অত্যন্ত এলোমেলো হয়ে আমারই বিছানায় এই দুপুর বেলা ঘুমিয়ে রয়েছে। কোনো এক পররাষ্ট্র মন্ত্রীর মৃত্যুতে এই দুপুরেই কলেজ ছুটি হয়ে গেল। দরজা খোলাই ছিল, নিঃশব্দে ঢুকে পড়েই ঘুমন্ত রাবেয়াকে দেখছি । বিষার দিন ফুরিয়ে এসেছে। হিমের ছোঁয়া লেগেছে পৃথিবীর প্রকৃতিতে, সংসারের তাবৎ মহিমায় শরৎ এসেছে আকাশে পেঁজা তুলোর পাহাড় তুলে । কিছুদিন থেকেই লক্ষ করছি, রাবেয়া এমনি এলোমেলো হয়েই শুয়ে থাকছে । আমি ওর মাথার কাছে বসলাম । ওর মুখের উপর ঝুকে পড়লাম । ওর উপর ঠোঁটের ভূ-ভাগে বিন্দু বিন্দু ঘাম, যা অনেক রূপসীদের জমতে দেখেছি, তখন তাকে আরো রূপসী আর কামিনী করে তোলে । মনে হলো, চুমু খেয়ে ফেলি। অন্যায় হবে না । রাবেয়া বাধা দেবে না । সে যে আজও আমায় ভালোবাসে, আজও সে মনে করে, আমিই তার প্রকৃত প্রেমিক ! শুধু কি কলমা-হাদিসের জোরে, ফতোযা মসলার দাপটে হামিদুলের একান্ত হয়ে সে আমার স্পৰ্শীসুখ থেকে বাইরে দাঁড়াবে ? আমার কাছে, আজ এই ইদতেব পুণ্য-ক্রিয়ার তার কোনো যৌন দায় নেই ? রাবেয়া একটু নড়ে উঠল । কোথায় একটা খুঁট করে শব্দ হলো । আমি সভয়ে আঁৎকে উঠে মুখ তুলে নিলাম। নিজেই আশ্চর্য হলাম, আমার কত ভয় ! চোখের সামনে মনের কিনারে ভেসে উঠল। ছেলেবেলার হামিদুল । ধরে রাখ মামুন ! খাস নে ! দেখলাম, স্বাস্থ্যময়ী নিদ্রাবতী রাবেয়ার কাপড় আলগা হয়ে খসে পড়া কোমর, তলপেট, বুকের চুড়া থেকেও কাপড় সরে গেছে, রাবেয়া জামার ভিতরে অন্য কোনো আবরণ দেয়নি । এও কি ঠিক হচ্ছে ? নিজেও কেমন চমকে উঠে দাঁড়ালাম । রাবেয়া আবার নড়ে উঠে চিত থেকে কত হয়ে গেল । আমি ঘর ছেড়ে ভিতর বারান্দায় চলে এলাম । জামা-কাপড় ছেড়ে মুখ হাত পা ধুয়ে ঠাণ্ডা পানি খেলাম এবং ইজিচেয়ারে লুঙ্গি পরে খালি গায়ে ছড়িয়ে বসে সিগারেট ধরালাম । সিগারেট খেলে ইদানীং মাথাটা সাফ হচ্ছে বলে মনে হয় । বুঝলাম, নেশায় ধরেছে। আস্তে আস্তে গা এলিয়ে শুয়ে গেলাম চোখ বুজে । d:ዔ