পাতা:সিমার - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সময় অতিবাহিত হতে থাকল। এবং ক্রমশ নিজেকে সমস্ত ঘটনা পূবাপর ভেবে নিয়ে মনে হলো, আমি একটা ব্যক্তিত্বহীন নিজীব প্রাণী । হামিদুলের কাছে আমার দেনাদায়ের অন্ত নেই, ঋণের পর ঋণ করে গেছি, কখনো সে শোধ নেয় নি, হাতে যা তুলে দিয়েছে, তাকে বলেছে দান, বলেছে। এ দেওয়া বন্ধুর কর্তব্য, কখনো সে ফেরত নেয় নি, কখনো সে তার এই দেওয়া-থেওয়া কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে আমায় পীড়া দেয়নি । আজ তিন মাস হতে চলল, হামিদুল তিনখানা চিঠি লিখেছে কেবল ৷ এম ও করে মাসে মাসে টাকা পাঠিয়েছে রাবেয়ার নামে, আমার প্রযত্নে । টাকাগুলো খরচ না করে বাক্সে ফেলে রেখেছি। সাদামাটা ফমলি চিঠি, টাকা পাঠালাম, দরকার মতো খরচ করবে, আরো যদি প্রয়োজন মনে করো লিখবে, আমি ভালো নেই, তোমরা কেমন আছ লিখে জানাবে । চিঠি এসেছে, সে-চিঠি খুলেও দেখেনি রাবেয়া, টাকা সম্পর্শ করেনি । বলেছে, এই তিন মাসের ভরণ-পোষণ তোমার, আমি অন্যের টাকা ছোেব কেন ? আমি বলেছি, এ টাকায় কী করবে না করবে, আমি কিছুই বলতে পারি নে, তোমার নামে পাঠানো টাকা, রেখে দিলাম, প্রয়োজন মনে করলে ফেলেও দিতে পার, এই নাও বাক্সের চাবি । চাবিটা খাটের উপর ফেলে দিয়ে কলেজ চলে গেছি, ফিরে এসে দেখেছি, চাবিটা তাকে তোলা রয়েছে, চাবি দিয়ে বাক্স খোলা হয়নি। টাকা। যেমন ছিল, তেমনিই পড়ে আছে । এই তিন মাসে হয়তো বড় জোর তিনদিন রাবেয়া আমার মানিব্যাগ খুলে কাছের দৈহাট্টার বাজারে সংসারের টুকিটাকি সামান-আসবাব, ছোটখাটাে তেল-তোয়ালের মতো নিত্যদিনের ব্যবহার্য জিনিসপত্র কিনে এনেছে । মন্টি নামে একটি অ্যাংলো রিকশা চালককে বলে রেখেছি, মিসেসকে তার ইচ্ছেমতো শহরটায় ঘুরিয়ে আনবে, কোথাও বেড়াতে যেতে চাইলে, সিনেমায় গেলে, নিয়ে যাবে, রাবেয়া কিন্তু দৈহাট্টার বাজার ছাড়া কোথাও কিছু দেখল না। একদিন কথায় কথায় বললাম, কোথাও গেলে তো পার । সারাদিন একলা શાસકો ! ফুলমতি সকালের রান্না করে রেখে চলে যায়। হাটবারে হাটে যায় আপন হাতে ফলানো সবজি নিয়ে বকুলতলার হাটে, সেদিন আর বিকালে আসে না । বিকালের রান্না পুরোটাই রাবেয়াকে করতে হয়। কিন্তু দুপুরটা ভীষণ নির্জন Gibr