পাতা:সিমার - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ফুলমতিকে আগে জানিয়ে রাখলে ভালো হতো । রাবেয়া বললে, তার কোনো দরকার করবে না । আমরা তো নেমস্তন্ন খেতে যাচ্ছি না। হাওয়া খেতে খেতে উঠিব গিয়ে । বাঘাই-এর দুধে পায়েস রাঁধবে। ফুলমতি । সরষের তেলে পরোটা । আর এক গেলাস দুধেল চা। কিন্তু এই বেলা ওঁড়ো দুধে চা দেব এখন । বিরক্ত হলে পারব না । -গুড়ো দুধ কেন ? -সে এক চিত্তির হয়েছে। বাঘাইয়ের দুধ লোলকি বাছুরে নিংড়ে চুষে খেয়ে ফেলেছে। ফুলমতি দুধ দেয়নি। বলতে বলতে রাবেয়া রান্নাঘরের দিকে চলে গেছিল সেদিন ; ফিরে এলে চায়ের কাপ হাতে নিয়ে বলেছিলাম-যাই বলো রাবি ! মুখোশ পরেই থাকি আর আত্মগোপন করে ভয়ে-ডিরেই থাকি, আমি আমার বিবেকটা সাফ রাখতে পারলেই খুশি । রাবেয়া চায়ে চুমুক দিয়ে বললে, তুমি ফের আবোলতাবোল ভাবতে শুরু করলে ! এইজন্যেই আমি তোমাকে সব কথা খুলে বলতে পারি না । আজ মনটা এত ভালো ছিল, ভেবেছিলাম, তোমাকে একটা সুন্দর স্বপ্নের কথা শোনাব, তা আর হলো না । --স্বপ্নের কথা ? বেশ তো ! শোনাও না ! -এখন তুমি বিরক্ত হবে । বাস্তবে মানুষ যা পায় না, স্বপ্নে তা খুঁজে বেড়ায় । বললাম, সচু বাত্ । ষোলআনা সত্যি। আমি কী ভেবেছি জানো ! দুঃখে-কষ্টে পড়ে মানুষ কবি কিংবা দার্শনিক হয়ে যায়, এটাও কিন্তু সচু বাত্ । আজকাল সস্তা কাব্য করার বাতিক হয়েছে আমার । স্বপ্নের কথা বললে তো ! সেদিন ভাবছিলাম, এই তিন মাস কোনো বাস্তব বিষয় নয় । স্রেফ একটা স্বপ্ন ! ভাবতে বেশ । কিন্তু আসলে এর চেয়ে রূঢ় বাঁকা কুটিল বাস্তব ব্যাপার আর কিছু নেই। এর স্মৃতি, এর সোয়াদ, এর তৃষ্ণা, অতৃপ্তি মানুষকে ফৌৎ করে । চোরা গোপ্ত একটা স্রোত তলে তলে নাড়া দেয়, ইমোশানে ঘাই মারে । পাকে পাকে জড়িয়ে দেয়। যেহেতু মানুষ আফটার অল মানুষই। মেশিন নয়। তাই এই তিন মাসে মানুষকে বিস্তর স্বপ্ন দেখতে হয়।--তোমার স্বপ্নটা কি শুনি ? রাবেয়া গভীর হয়ে বললে, তুমি মাঝে মাঝে এমনভাবে কথা বল, মনে হয়, অন্যের মনের শেষ কিনারায় তোমার দৃষ্টি পৌঁছে গেছে। সেখানে এইমাত্র যে আবেগের ছোট্ট বুদবুদটা উঠে ফেটে গেল, সেটুকুও তোমার নজর এড়ায় নি।--যাই হােক । স্বপ্ন দেখলাম । একটা মেলায় গেছি। আমি । বিনোদপুরে পৌষ মাসে প্রতি শনি-মঙ্গল মেলা বসত, মনে পড়ে ? সেই রকম মেলা । মনের 'e')