পাতা:সিমার - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তোমার এ শহর গাঁয়ের জমিদারের মতো ঢেকুর হাই তুলে চলে, পায়ে কাদা মেখে জংলায় নামে । বিশাল আকাঙক্ষা নিয়ে এ শহর আপ্ৰাণ শহর হতে চাইছে, সাধ্য তার সামান্যই। থাক। ওসব বাজে কথা। ওদের একটু গাঁথো দেখি । কোথায় যাবে ওরা ? শুধালাম, তোমরা চললে কোথায় চাচা ? এলে কোথা থেকে ? চাচা বলে ডাকতেই চাচার মনের ভেতর নাড়া খেয়ে গেল । বিড়িতে সুখটান মেরে বেটা ফেলে দিল ছুড়ে । তারপর গড়গড় করে বলে যেতে থাকল, আলাম আপনার তেঁৎলে থেগে, যাচ্ছি তক্তিপুর । মেইছেলিডারে লিয়ে যাচ্ছি। সোয়ামীর বাড়ি । সোয়ামী আজি আট মাস লয় মাস খোঁজ লিলে না । বাচ্চা হলো, তবো আসে না । প্রৌঢ় দাঁতের ফাঁক দিয়ে চিরিক করে থুতু ফেলে বললে, হাওয়া মুরগের পানা পুরুষ-চাষার মন, মছলমানের গোরস্তালীতে হামেশা যা হচ্ছে বাবাজীবন ! কেউ তালাক দিয়ে লেয় না, কেউবা তালাকও দেয় না, ভাত দিবারও নাম লোয় না, বোঝেন বাবা ! এ কেমুনধারা ছান্তি একবার জরিপ লেন দেহি! রাবেয়ার দিকে চেয়ে দেখলাম, চোখমুখের সজীব মাধুরী কোন এক অদৃশ্য ধূমল অন্ধকার চুষে নিম্প্রভ করে দিচ্ছে। চােখের সামনে দেখা এ দৃশ্যের একটা নিদারুণ প্ৰতিক্রিয়া আছে। প্রৌঢ় তখনও বলে চলেছে, তক্তিপুরের মোড়ল শাবান মিঞা এটু ভরসা। দিয়েছে আমারে, দেখি যাই! যতি মেইডার এটু হাত-পা ধরে গতি করতে পারি । বললাম, বাচ্চার টানে যদি নেয়, নিতে পারে । মেয়ের স্বামী কি ফের নিকে করেছে ? প্রৌঢ় বললে, সেই রকমডাই শুনছি বাপধন । বাচ্চাটি তীক্ষ্ণ রেয়াজে ফের বেজে উঠল । ওপারে নীেকয় মাঝি এসে গেছে দেখা যায়। লোকটি এবার উঠে দাঁড়ায় । বউটিও খাড়া হয় । বাচ্চাকে ঘাড়ে পাট করে বুকের সাথে চেপে ধরে নীেকোর দিকে চেয়ে দেখতে দেখতে সামনে পা বাড়ায় । রাবেয়া কখন দ্রুত এগিয়ে গেছে বউটির পেছনে । আমার পেছনে আধ-বুড়া বিপর্যন্ত লোকটি। দেখলাম খানিকটা কুঁজো হয়ে হাঁটছে। বললে, শেষ জুয়ারের পানি, তারই ফসল এই মেয়ে, বাবাজী ! দােমাদ যেতি না লেয়, কুন গাঙে ভাসাব এই মুখপুড়িকে, ভাবেন তো মিঞা ! * -কী করেন। আপনি ? জমি জায়গা কিছু ? --কিছু নাই বাবা । শুন্দু এই জ্বালা-পুড়া করা গতির । এই হচ্ছে সিমিস্যা, চলে না বাপ ! লিজে খাব, না, তারে খাওয়াব, কাহেন বাবাজীবন ! এ গাঁতরে আর VG