পাতা:সিমার - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নড়ে না। তুমি ছাড়লেও এর একটা সামাজিক অনুভূতি আছে। নেই ? বললাম, আছে বৈকি ? -এই অনুভূতি বার বার ভয় দেখায় একটি শিক্ষিত মনকেও । এই সামাজিক অনুভূতির সামনে ব্যক্তির মযাদা সোস্যাল প্রেসটিজ ভালোবাসার খাতিরে কতটা মাথা নোয়াবে আমি তোমাকে দিয়ে তার একটা পরিমাপ করেছি। কেন জানি না, আমি কেমন আঁৎকে উঠলাম । রাবেয়া বললে, ভেবেচিন্তে দেখলাম, খুবই সত্য কথা, আমার জীবনের এই দুর্বিষহ ভার অনেক বড় মনও বইতে গিয়ে দুঃখ আর ক্লান্তিবোধ করে। এখানে সুখ কোথায় ? সুখের জন্য এসেছিলাম। এমন তো নয়, পাপমোচন করতে এসেছি মামুন ! তোমার স্পর্শে যদি জীবনটা শুদ্ধ হয় ! দায় খালাস হলেই তুমি মুক্ত, ७q७ कि छानि (न्म ? সারা পথ দুজনে কোনো কথা হলো না। সন্ধ্যা নামল । চাঁদ উঠল। কালো মেঘটা মাথা ঠেলে উঠে পশ্চিম দিগন্তেই মিলিয়ে গেল। শুধু মনের মধ্যে ভাসতে লাগল, বাজতে লাগল-চিতি কোনো নদী নয় । সাপ । বাজতে লাগল কানে, শেষ জুয়ারের পানি, তারই ফসল এই মেয়ে, বাবাজী ! দামাদ যেতি না লেয়, কুন গাঙে ভাসাবা এই মুখপুড়িকে, ভাবেন তো মিঞা ! আমি আর ভাবতে পারছিলাম না । পাশের ঘরে রাবেয়া কী করছে দেখতে গিয়ে দেখি তার হাতে একটি ফোটো । সেটা দেখছে এক মনে । আমাকে দেখে দ্রুত বালিশের তলায় লুকিয়ে ফেলল। সে কি তবে হামিদুলের ছবি দেখছিল ? খাটে বসতেই আমার কোলে মুখ গুজে সুফল ফেপে কাঁদতে লাগল। বললে কান্না ভেঙে পড়া সুরে, চিতি নামটা খুব মিষ্টি মামুন ! বউটাও কত ভালো । নরম, বোকা । দুনিয়ার কিছু বোঝে না। আমার এখন বালিশের তলার ছবিটা কেমন দেখতে ইচ্ছে হচ্ছিল, কেন এমন তীব্ৰ কৌতুহল হচ্ছে, বুঝতে পারছিলাম না। রাবেয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে ফেললাম, তোমার সব কথাই হয়তো ঠিক রাবেয়া, কেঁদো না । রাবেয়া কোল ছেড়ে মুখ তুলে একবার আমায় দেখে নিয়ে, আবার মুখ গুজে আর্তকান্নায় গুড়ো হতে লাগিল । Aο