পাতা:সিমার - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পর কাঁদতে কাঁদতে আমার বুকে কিল ঘুষি ছুড়ল । তার পর বুকের উপর মাথা ঠুকতে ঠুকতে শান্ত হযে বসে থাকল। কিছুক্ষণ ৷ হঠাৎ খেয়াল হলো, রাবেয়ার চোখ বন্ধ, রাবেয ঢুলছে। ওকে ধন্বতে গেলাম । সে অজ্ঞান হয়ে বিছানায় গড়িয়ে গেল। আমার পায়ের তলায় লুটিয়ে যেন বা নিঃশব্দ নিম্পন্দ হয়ে গেছে । ঠিক এসময় কনের কাছে খতিবের কণ্ঠস্বর স্পষ্ট শুনতে পেলাম, হামিদুলিব পয়সায় তুমি মানুষ হয়েছ। তোমার বাচ্চাও কি মানুষ হবে ? ক্যাগের বাসায় বগের ডিম ! কিন্তু তুমি নেমকহারাম নও। রাবেয়াকে তুলে নিয়ে গিয়ে তার বিছানায় পাশের ঘরে শুইয়ে দিলাম। রাত্রি বাড়ার সাথে সাথে তার গায়ে মৃদু জুব দেখা দিল । আকাশ যেন ভেঙে পড়তে লাগল । জ্বরে আচ্ছন্ন হয়ে ঘোর বাদলার এই আকাশের কালিমালিপ্ত নিশীথে রাবেয়া চমকে চমকে উঠল । মাঝে মাঝে চোখ মেলে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইল। ঘরের মধ্যে কাকে যেন খুঁজতে লাগল ! আমি এগিয়ে গিয়ে চােখের সামনে দাঁড়ালাম । কিছুক্ষণ আমাব দিকে চেয়ে থেকে চোখ বুজে ফেলল। শেষ রাত্রি অবধি সে জ্বর আর কমল না । দিনেব বেলা ডাক্তার ডেকে আনলাম । সকালের দিকে বৃষ্টির দাপানী কিছু কমে এলেও, বিকালের দিকে আকাশ বার্নিশ করা মেঘে। থমথম করতে লািগল । হাওয়া উঠিল । ডাক্তার বললে, স্নায়বিক উত্তেজনা । সব সময় পাশে থাকবেন । রোগী প্ৰলাপ বকতে পারে । তাই হলো, পরের দিন রাত্রে জ্বর আরো বাড়ল । আশ্বিনের অধি আরো পরিব্যাপ্ত হয়ে অবিশ্রান্ত ঝড় আর বর্ষণে পৃথিবীকে যেন নিশ্চিহ্ন করে দিতে চাইল । হু হু বাতাসে কত কী মনে পড়তে লাগিল । রাবেয়া প্ৰলাপ বকে চলেছে : আসছি খোকা দাঁড়া ! খোকাবাবু যায় লাল জুতুয়া পায় । তার পরই, দেবে না। অামায় ? দাও ? এবং তার পর পাগলের মতো হেসে ওঠে । আমি বিছানার পাশে বসে থাকি । ফুলমতি বলে, এই বাদলে পানিতে বিষ থাকে সাহেব । জ্বর-জ্বালা পাঁচ রকম অসুখ-বিসুখ হয়ই। এটু ভালো মুতন ওষুধপথ্যি কল্লেই সেরে যাবে বুকুমনি । এই ক দিনেই সুরৎ দেখেচোন, মিশির মুতন পুড়ে গেইচে, কালো হয়ে গেইচে । চেয়ে দেখতে দেখতে কখন আমার দুই চোেখ ঝাপসা হয়ে ওঠে। রোগীর মাথায় জলপটি দিয়ে বসে থাকি । তেতো বড়ি খেতে দিই। রাত্রি জেগে শিশি থেকে দাগ মেপে ওষুধ দিই। একদিন আচ্ছন্ন অবস্থায় রাবেয়া বলে ওঠে, টাঙ্গা