পাতা:সিমার - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আমার চোখের সামনে হামিদুল দাঁড়িয়ে । বাইরে টাঙ্গা । সময় প্ৰস্তৃত । এবার ওরা যাবে। আমি খুঁজব । এই অতৃপ্ত অনুসন্ধান কেউ টের পাবে না । কাল হয়তো চন্দন সোম আসবে। এসে বসবে আমার ঘরে প্রস্তৃত চেয়ারে । কথা হবে। অনেক কথা । কিংবা হয়তো কোনো কথাই হবে না । কেবল সে শুধাবে, রাবেয়া কোথায় ? আমি অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে বলব, নেই! -কোথায় গেছে ? —গতকাল তার আপনি সিংহাসনে পুনবার অভিষেক হয়েছে, রাণীর মতো । —কি সব হেঁয়ালী করছ, মামুন ! আমি রাবেয়ার সাথে কথা বলতে এসেছি, কনগ্র্যাচুলেশন দেব না ? -কাকে দেবে, সে তো নেই ! -কেন নেই ? -ওকে তালাক দিয়েছি । -সে কি ! চন্দন দেয়ালের এনলার্জ করা মুন্নার ছবির দিকে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকবে । আমি তখন একটি বোরকা-পরা মহিলার অতৃপ্ত প্রেমের কাহিনী শুরু করব । আহত দলিত একটি ভাস্কর্য অন্ধকার পাষাণে খোদিত হবে । শৃঙ্খলের ছড়াচ্ছড় শব্দ হবে । দারুণ আর্তনাদ শোনা যাবে, তৃষিত ক্ষুধিত একটি প্রেম উচ্চকিত হয়ে পৃথিবীর বাতাসে ভেসে যাবে । আমার কাহিনী শেষ হবে । আমার কথকতা ফুরিয়ে যাবে হে মৌলভী মৌলানা সাহেবগণ ! রাবেয়া, বোরকা-পরা বাদল রাতের মহিলা । আমায় টাঙ্গায় ওঠার আগে পায়ে হাত ছুয়ে নিচু হয়ে কদম বুলি (প্ৰণাম) করল । বললে, শেষ তালাকটি দাও ஆr বললাম, ওটা থােক। ঐ একটি বাঁধন চিরকাল মুসলিম জাহানের কাছে অজ্ঞাত অশ্রুত থােক রাবেয়া । তুমি আর আমি জানিব । আমি তোমায় ত্যাগ করতে পারি নি । মুখের কথায়, একটি শব্দে এই সম্পর্ক মিথ্যা হয় না । রাবেয়া বললে, তাই হােক । তার পর বললে, যাবার আগে মনে মনে আবৃত্তি করি, তুমি সুন্দর । তুমি পবিত্র । মানুষ তোমাকে ভুলতে পারে না। চিতির দিগন্তে দ্রুতগামী, গাজীপুর অভিমুখী একটি টাঙ্গা জানলা থেকে