পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/১০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ভবিষ্যৎ।
৯৩

মনোনিবেশ করিবার অবসর পাইলেন না। তাঁহার নিয়োগানুসারে সিরাজদ্দৌলাই সকল কার্য্য নির্ব্বাহ করিতে আরম্ভ করিলেন। কিন্তু রাজকার্য্যে হস্তক্ষেপ কটিতে না করিতেই সিরাজের মোহনিদ্রা ভাঙ্গিয়া গেল। সম্মুখে যে সিংহাসনে বলদর্পিত মাতামহ দৃঢ়পদে আসীন রহিয়াছেন, যে সিংহাসনের ভবিষ্যৎ উত্তরাধিকারী বলিয়া ধাত্রীক্রোড় হইতে সিরাজদ্দৌলা পরম সমাদরে লালিত পালিত হইয়া আসিয়াছেন, সে সিংহাসনে যে একদিনের জন্য ও সিরাজদ্দৌলার পদস্পর্শ হইবে, তাহার নিশ্চয়তা কি? কর্ম্মচারিগণ স্বার্থসাধন করিবার প্রলোভনে নওয়াজেসের পক্ষভুক্ত হইয়াছেন, রাজবল্লভ বিপুল ধনভাণ্ডার লইয়া নওয়াজেসের হিতাকাঙ্ক্ষায় নিযুক্ত রহিয়াছেন, সিরাজের বিরুদ্ধে লোকচিত্ত বিদ্বেষ- বিষে পরিপূর্ণ করিবার কোন আয়োজনেরই ত্রুটি হইতেছে না। এদিকে সিরাজদ্দৌলার আশা ভরসার একমাত্র সহায় বৃদ্ধ নবাব অন্তিমশয্যায়, রাজকোষ অর্থশূন্য,—দেশ শক্রসঙ্কুল। এরূপ অবস্থায় বাহুবলে সিংহাসন রক্ষা করিবার জন্য, সিরাজদ্দৌলাও গোপনে গোপমে আয়োজন করিতে লাগিলেন। নওয়াজে ঢাকার নবাব, রাজবল্লভ নওয়াজেসের প্রতিনিধি;—উভয়েই বিপুল ধনসঞ্চয় করিয়াছেন, এবং উভয়েই সিরাজদ্দৌলার চক্ষে প্রধান শ্রেণীর রাজবিদ্রোহী। যদি সিরাজদ্দৌলা কোনরূপে একবার সিংহাসনে পদার্পণ করিবার অবসর পান, তবে যে তিনি নওয়াজে ও রাজবল্লভকেই সর্বাগ্রে শাসন করিবেন, সকলেরই তাহা দৃঢ়নিশ্চয় হইল। তখন আত্মরক্ষা ও স্বার্থসাধনের জন্য নওয়াজেদ এবং রাজবল্লভ প্রকাশ্যভাবে আত্মপক্ষ প্রবল করিতে আরম্ভ করিলেন

 সিরাজদ্দৌলার ভবিষ্যৎ অদৃষ্টাকাশ ঘন-তমসাচ্ছন্ন হইয়া আসিতে লাগিল। তিনি স্পষ্টই বুঝিতে পারিলেন যে, বাহুবল ভিন্ন সিংহাসন