পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/১২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১৪
সিরাজদ্দৌল্লা।

নাজিম বলিয়াই হউক, আর নওয়াজেসের উত্তরাধিকারী বলিয়াই হউক, নওয়াজেসের ধনরত্নে রাজবল্লভ অপেক্ষা সিরাজদ্দৌলারই যে শাস্ত্রানুমোদিত অধিকার, তাহা কেহই অস্বীকার করিতে পারিবে না। সিরাজজৌলা সেই অধিকার সংস্থাপন করিয়া পিতৃব্যের ত্যক্তসম্পত্তি সহ পিতৃব্যরমণী ঘসেটি বেগমকে অন্তঃপুরে আনিয়া প্রতিপালন করিতে চাহিলে রাজবল্লভ কি বলিয়া বাধা দিবেন। আর লোকেই বা কি বলিবে? সিরাজদ্দৌলা সিংহাসনে বসিতে নাপারিলে এ সকল গোলযোগর কিছু মাত্র সম্ভাবনা থাকে না। অগত্যা রাজবল্লভ মতিঝিলে সেনাসংগ্রহ করিয়া বাহুবলে ও মন্ত্রণাকৌশলে সিরাজদ্দৌলার গতিরোধ করিবার চেষ্টা করিতে লাগিলেন।

 সেকালে পথ ঘাটের তত সুবিধা ছিল না। লোকে নৌকাপথে দেশ বিদেশে যাতায়াত করিত। সিপাহীরা নৌকায় চড়িয়া যুদ্ধযাত্রা করিত, বণিকেরা নৌকাযোগে বাণিজ্য ব্যাপার চালাইত, বিলাসীরা নৌকায় নৌকায় জলবিহারে বাহির হইত;—পদ্মা এবং ভাগীরথী | বহিয়া লোকে সহজেই মুর্শিদাবাদে আসিতে পারিত। মুর্শিদাবাদে কয়েকটি নগরতোরণ ভিন্ন কোন দুর্গ কি নগরপ্রাচীর ছিল না। রাজধানী নিতান্ত অরক্ষিত অবস্থাতেই পড়িয়াছিল। দেশ অরক্ষিত, প্রজা নিরপেক্ষ, জমীদারদল অসন্তুষ্ট; এরূপ অবস্থায় কেহ সাহস করিয়া সহসা আক্রমণ করিলে সহজেই কার্যসিদ্ধি হইতে পারে। সুতরাং জমীদারগণ ও জগৎশেঠ মনের মত নবাব নির্বাচন করিবার জন্য চেষ্টা করিতে লাগিলেন। আলিবর্দ্দী যদিও সিরাজদ্দৌলাকে সিংহাসনে বসাইবেন বলিয়া পূর্বেই ঘোষণা দিয়াছিলেন, এবং সিরাজদ্দৌলা তদনুসারে ইউরোপীয়দিগের নিকটেও নজর পাইতে আরম্ভ করিয়াছিলেন,