পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/১৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১৬
সিরাজদ্দৌলা।

মন্ত্রণাক্রমে দিল্লী হইতে একখানি বাদশাহী সনদ আনাইবার চেষ্টা করাই স্থির হইয়া গেল;—দিল্লীতে প্রচুর অর্থবৃষ্টি হইতে লাগিল।[১]

 যাঁহারা সিরাজদ্দৌলাকে পদচ্যুত করিবার জন্য এই সকল ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হইতেছিলেন, তাঁহারা সকলেই শওকতজঙ্গ ও তদীয় পিতা সাইয়েদ আহমদকে বিলক্ষণরূপ চিনিতেন। সাইয়েদ আহমদ প্রথমে উড়িষ্যার শাসনকর্তা ছিলেন। তিনি সেখানে উৎকলরমণীর উৎকট-সৌন্দর্য্যে আত্মবিস্মৃত হইয়া গৃহস্থ-ললনার সর্ব্বনাশ সাধনের আয়োজন করায় ধর্ম্মণীল আলিবর্দ্দী তাঁঁহাকে উড়িষ্যা হইতে দূর করিয়া দিয়াছিলেন।[২] সেই সাইয়েদ আহমদের দৃষ্টান্ত ও উপদেশ পাইয়া শওকতজঙ্গ তরলহৃদয়ে সুশিক্ষালাভের অবসর পান নাই। সিরাজ বরং বিদ্যালাভ করিয়াছিলেন, সময়ে সময়ে রাজকার্য্য পরিদর্শন করিয়া রাজনীতিজ্ঞ হইয়াছিলেন, এবং আবশ্যক হইলে অসিহস্তে সম্মুখযুদ্ধে বীরের ন্যায় জীবন বিসর্জ্জন করিতেও যে কাতর নহেন, তাহারও পরিচয় প্রদান করিয়াছিলেন। কিন্তু শওকতজঙ্গের ইহার কোন সদগুণই ছিল না। তথাপি লোকে বাছিয়া বাছিয়া সিরাজের পরিবর্তে শওকতজঙ্গকে সিংহাসনে বসাইবার জন্য ব্যাকুল হইয়াছিল কেন? ইহার একমাত্র উত্তর এই যে, দেশের জন্য বা দশের জন্য কেহই বাকুল হয় নাই, সকলেই আপন আপন স্বার্থসাধনের জন্য ব্যাকুল হইয়াছিল। সেই জন্য পাত্রপাত্র বিচার করা আবশ্যক হয় নাই। ইহারাই কালে সিরাজদ্দৌলার কলঙ্ক রটনা করিয়া আত্মপাপ ক্ষালন করিয়া গিয়াছেন![৩]

  1. Stewarts History.
  2. “Being much addicted to pleasure, he was guilty of excesses in procuring women of his harem from the inhabitants.” Stewart.
  3. শ্রীযুক্ত কালীপ্রসন্ন বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয় কুচক্রী পাত্রমিত্রগণের পক্ষ সমর্থ