পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/১৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১৮
সিরাজদ্দৌল্লা।

তাঁহাদের মতানুসারে চলিতে হইলে, কলিকাতার ইংরাজদিগকে নবাবের শরণাগত হইয়া তাঁহার আশ্রয়ে আত্মরক্ষা করিতে হইত; এবং তাহাতে নবাব সরকারের সহিত ইংরাজবণিকের কিছুমাত্র সংঘর্ষ উপস্থিত হইবার সম্ভাবনা থাকিত না। কিন্তু কলিকাতার ইংরাজগণ সিরাজদ্দৌলার সাহায্য ভিক্ষার আদেশ পাইয়াও, সিরাজদ্দৌলার শত্রুদলের সহায়তা করিতে অগ্রসর হইলেন, এবং নবাবের অনুমতি না লইয়াই দুর্গ সংস্কারে হস্তক্ষেপ করিলেন।

 আলিবর্দ্দীর আর অধিকদিন বাঁচিবার আশা রহিল না।—একে বৃদ্ধকাল,তাহাতে উদরী রোগ। সুতরাং কিছুকাল চিকিৎসকের উপদেশ পালন করিয়া অবশেষে আলিবর্দ্দী, ঔষধ সেবন পরিত্যাগ করিলেন। সকলেই বুঝিল যে,জীবনপ্রদীপ আর অধিকদিন আলোকদান করিবেনা।

 আলিবর্দ্দীর শেষদিন যতই নিকট হইতে লাগিল, সিরাজদ্দৌলার ভবিষ্যদাকাশ ততই তমসাচ্ছন্ন হইয়া আসিতে লাগিল। অবশেষে এক দিন বৃদ্ধমাতামহ দৌহিত্রকে সান্ত্বনাবাক্যে আশ্বস্ত করিবার জন্য সর্ব সমক্ষে বলিতে আরম্ভ করিলেন:—

 “আমি কেবল যুদ্ধক্ষেত্রে অসিহস্তে জীবনযাপন করিয়াই সংসার হইতে অবসর গ্রহণ করিলাম। কিন্তু কাহার জন্য এত যুদ্ধ বুঝিলাম, কাহার জন্যই বা কৌশলনীতিতে রাজরক্ষা করিবার জন্য প্রাণপণ করিয়া মরিলাম? তোমার জন্যই ত এত করিয়াছি।

 “আমার অভাবে তোমার কিরূপ দুর্গতি হইবে, তাহা ভাবিয়া কত রজনী জাগরণে অতিবাহিত করিয়াছি;—তুমি তাহা কিছুই জান না। আমার অভাবে, কে কি ভাবে তোমার সর্বনাশ করিতে পারে, তাহা আমার কিছুই অপরিজ্ঞাত নাই।