পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/১৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪০
সিরাজদ্দৌলা।

কথা আর অধিক কি বলিব; তিনি সিংহাসনে পদার্পণ করিবামাত্র আপন পিতৃব্যরমণীর সর্ব্বস্ব লুণ্ঠন করিয়াছিলেন।[১]

  1. এই ঘটনা যে ইংরাজদিগের কৈফিয়ৎ পাইবার পরে সংঘটিত হয়, ইংরাজ লেখকেরা তাহা প্রকারান্তরে স্বীকার করিয়া গিয়াছেন। বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয় নবাবী আমলের বাঙ্গালার ইতিহাসেও তাহা স্বীকার করিয়াছেন। কিন্তু ব্যঙ্গচ্ছলে ইহাও লিখিয়াছেন,—“তথাপি পরমাত্মীয় ভগ্নীপুত্র মাতৃস্বসাকে অন্তঃপুরে আনাইবার অধিকারী, ইত্যাদি কথায় সিরাজের সমস্ত অত্যাচার সমর্থন করিতে যাওয়া বিড়ম্বনা মাত্র।” কৌতুকের বিষয় এই যে, ধনরত্ন সহ মাতৃস্বসাকে রাজান্তঃপুরে আনয়ন করা ভিন্ন আর কোন অত্যাচার বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয়ও লিপিবদ্ধ করেন নাই। রাজবল্লভের সহিত সন্ধিসুত্রে বিনা রক্তপাতে যে এই ঘটনা সংঘটিত হয়, তাহারও উল্লেখ করা প্রয়োজন বলিয়া বিবেচিত হয় নাই। উপরন্তু বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয় লিখিয়াছেন যে, এরূপ বিনা রক্তপাতে উদ্দেশ্য সাধনের বাহাদুরী প্রবীণ মন্ত্রিদলের—সিরাজদ্দৌলার নহে। সেই কথার সমর্থন জন্য বলিয়াছেন যে, এই ঘটনার পরে প্রবীণ মন্ত্রিদল পদচ্যুত হন। কিন্তু এরূপ অনুমাণের ভিত্তি কোথায়, তাহা প্রদর্শিত হয় নাই। সিরাজ কাহারও কথায় কর্ণপাত করিতেন না, ঔদ্ধত্যবশতঃ যাহা মনে করিতেন, তাহাই করিতেন—ইহা বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয় একাধিকবার বর্ণনা করিয়া মুতক্ষরীণ হইতে প্রমাণ উদ্ধৃত করিয়াছেন। তাহা সত্য হইলে, মতিঝিল অধিকারের বাহাদুরী সিরাজেরই প্রাপ্য হইয়া পড়ে। তদ্বারা বন্দ্যোপাধ্যায়-বর্ণিত সিরাজচিত্র খণ্ডিত হইয়া যায় বলিয়াই কি এস্থলে প্রবীণ মন্ত্রিদলের উপদেশের অবতারণা করা হয় নাই?