পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/১৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৫০
সিরাজদ্দৌলা।

আক্রমণের কোনরূপ আয়োজন করিল না; বরং জমাদার উমরবেগ নখাগ্রগণনীয় ইংরাজ সেনাগণকে সগর্ব্বে পদচালনা করিতে দেখিয়া সূচনাতেই বলিয়া পাঠাইলেন যে, তিনি যুদ্ধ করিতে আসেন নাই। সে কথায় কেহ কর্ণপাত করিল না। ওয়াট্‌স্ সাহেব আহার নিদ্রা পরিত্যাগ করিয়া অক্ষুন্ন অধ্যবসায়ে সমুদয় রজনী অন্নপান, সংগ্রহ করিতে লাগিলেন; অগণিত নবাবসেনা বাহুবলে দুর্গ আক্রমণ করিলে, তাঁহারাও যে বাহুবলে আত্মরক্ষা করিতে কিছুমাত্র ত্রুটি করিবেন না, তাহারই আভাস প্রদান করিতে লাগিলেন, এবং সেই উদ্দেশ্যে বড় বড় কামানে গুলি, গোলা, বারুদ বোঝাই করিয়া, আক্রমণ প্রতীক্ষায় সিংহদ্বার রোধ করিয়া সসৈন্যে অপেক্ষা করিতে লাগিলেন।

 সোম, মঙ্গল, বুধ চলিয়া গিয়াছে। বৃহস্পতিবারও চলিয়া যায়। প্রাচীরের বাহিরে সিপাহী সেনা কাতারে কাতারে সমবেত হইতেছে, ইচ্ছা করিলে এখনি কাশিমবাজারের ক্ষুদ্র দুর্গ ধূমপুঞ্জে সমাচ্ছন্ন করিয়া মুহর্ত্তমধ্যে ভস্মাবশেষ করিতে পারে। অথচ একজন সিপাহীও বন্দুক উঠাইতেছে না কেন? ইংরাজগণ একেবারে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হইয়া পড়িলেন। অবশেষে এরূপ নিদারুণ উৎকণ্ঠা অসহ্য হইয়া উঠিল;—ব্যাপার কি, তাহা নির্ণয় করিবার জন্য সকলে মিলিয়া পরামর্শ করিয়া ডাক্তার ফোর্থকে উমরবেগের নিকট পাঠাইয়া দিলেন।

 ডাক্তার সাহেব যথাকালে দুর্গমধ্যে প্রত্যাগমন করিলে প্রকৃত তথ্য প্রকাশিত হইয়া পড়িল। সকলেই শুনিল যে, ওয়াট্‌স্‌ সাহেবকে নবাব দরবারে হাজির হইয়া একখানি মুচলিকা-নামা লিখিয়া দিতে হইবে; সহজে সম্মত না হইলে তাঁহাকে বলপূর্ব্বক ধরিয়া লইয়া