পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/১৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সন্ধির চেষ্টা।
১৫১

যাইবে,—সেই জন্যই এত সৈন্যসামন্ত সম্মিলিত হইয়াছে। কৌতুহল নিবৃত্ত হইল বটে, কিন্তু উৎকণ্ঠা দূর হইল না। উমরবেগের কথার উপর নির্ভর করিয়া ওয়াট্‌স্ সাহেব আত্মসমর্পণ করিতে সাহস পাইলেন না। নবাবের অভিপ্রায় কি, তাহা জানিবার জন্য যথাবিহিত সম্মান পুরঃসর আবেদনপত্র প্রেরিত হইল। তাহাতে লিখিত হইল যে, নবাববাহাদুরের অভিপ্রায় অবগত হইতেই যাহা কিছু অপেক্ষা, তিনি যাহা বলিবেন, ইংরাজেরা তাহাতেই সম্মত হইবেন। যথাকালে কেবল এইমাত্র উত্তর আসিল;—“দুর্গ প্রাকার চুর্ণ করিয়া ফেল; তাহাই নবাবের একমাত্র অভিপ্রায়।”[১]

 ইংরাজেরা শিষ্টাচারের অনুরোধে লিখিয়াছিলেন যে, নবাববাহাদুর যাহা চাহিবেন, তাঁহারা তাহাতেই সম্মত হইবেন। এক্ষণে নবাব যাহা চাহিলেন, ওয়াট্‌স্ সাহেব তাহাতে শিহরিয়া উঠিলেন। তিনি জানিতেন যে, ইংরাজ-দরবার প্রাণান্তেও এরূপ ত্যাগস্বীকার করিতে প্রস্তুত নহেন। বাস্তবিক কলিকাতার ইংরাজ-দরবার সিরাজদ্দৌলাকে ভাল করিয়া চিনিতে পারেন নাই। তাঁহারা কাশিমবাজার অবরোধের সংবাদ পাইয়া বুঝিয়াছিলেন যে, ইহা হয় ত কিছু উৎকোচ উপঢৌকন আদায় করিবার নূতন কৌশল। সুতরাং যেমন বুঝিয়াছিলেন, সেই রূপ ভাবেই নবাবের মনস্তুষ্টিসাধনের আয়োজন করিয়াছিলেন। সিরাজদ্দৌলা বালক হইলেও দেশের রাজা;—এখন হয় ত তাঁহাকে, আর মোমের পুতুলে কি কাচের খেলেনায় প্রতারিত করা সহজ হইবে না, এমন কথা ইংরাজের উর্ব্বরমস্তিষ্কে স্থানলাভ করিল না! তাঁহারা

  1. Hastings'. MSS. vol. 29209