পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/১৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৫৪
সিরাজদ্দৌলা।

 ইতিহাসলেখকদিগের স্বকপোলকল্পিত বা আত্মস্বার্থ বিজৃম্ভিত সরস পদলালিত্য অপেক্ষা এই সকল কাগজপত্র অধিকতর মূল্যবান। ইহাতে সিরাজ-চরিত্রের যে পরিচয় প্রাপ্ত হওয়া যায়, তাহার সহিত ইতিহাস বর্ণিত সিরাজদ্দৌলার আকাশ পাতাল প্রভেদ। ইংরাজেরা পদাশ্রিত বণিক হইয়াও নবাবের বিনানুমতিতে যে দুর্গপ্রাকার রচনা করিয়াছিলেন, কোন্ স্বাধীন নরপতি তাহা চূর্ণ করিবার জন্য আয়োজন না করিতেন? ইহাতে সিরাজদ্দৌলার প্রবল প্রতাপ ও শাসনদার্ঢ্যই প্রকাশিত হইয়াছে। ইংরাজেরা পলায়িত রাজকর্ম্মচারীদিগকে নির্ব্বিবাদে কলিকাতায় আশ্রয় দিবার অবসর পাইলে নবাবের রাজশক্তিকে আর কেহ মুহূর্ত্তের জন্যও সম্মান করিত না, আবশ্যক হইলেই কলিকাতায় পলায়ন করিত। শাসনসংরক্ষণের জন্য অবশ্যই তাহার গতিরোধ করা আবশ্যক। কোম্পানীর নামের দোহাই দিয়া ইংরাজগণ যাহাকে তাহাকে বিনা শুল্কে বাণিজ্য করিবার পরোয়ানা বিক্রয় করিয়া আত্মোদর পরিপূর্ণ করিতেন; তাহাতে দেশের লোকের স্বাধীন বাণিজ্য অবসন্ন হইত, রাজকোষ শুল্কগ্রহণে অযথা বঞ্চিত হইত। এরূপ স্বেচ্ছাচার নিবারণ না করিলে কোন্ নরপতি সিংহাসনের অধিকারী বলিয়া গর্ব্ব করিতে পারিতেন। হলওয়েলের অত্যাচারে কালা বাঙ্গালী জর্জ্জরিত হইতেছিল, তাহার গতিরোধ করিবার চেষ্টা না করিলে কোন্ নিরপেক্ষ ইতিহাসলেখক সিরাজদ্দৌলাকে আশীর্বাদ করিতে সম্মত হই-