ছিল না। তাহার পর যখন সংবাদ পাইলেন যে, মর্ম্মাহত সিরাজদ্দৌলা কাশিমবাজার অবরোধ করিয়া, ইংরাজ রাজকর্ম্মচারী ওয়াট্স্ সাহেবকে কারারুদ্ধ করিয়া মুচলিকা-পত্র স্বাক্ষরিত করাইয়া লইয়া, স্বয়ং সসৈন্যে যুদ্ধ যাত্রা করিতেছেন, তখন আর নিশ্চিন্ত থাকিবার অবসর কোথায়? তথাপি ইংরাজেরা নগর-রক্ষার জন্য যথোপযুক্ত আয়োজন করিলেন না কেন? সিরাজদ্দৌলার বিচিত্র ইতিহাসের আদ্যোপান্ত যেরূপ রহস্যপরি- পূর্ণ, ইংরাজবণিকের এরূপ বিমূঢ় ব্যবহারের মূলেও সেইরূপ নিগূঢ় রহস্য বর্ত্তমান।
ইংরাজেরা জানিতেন যে, সিরাজদ্দৌলার রাজসিংহাসন “নলিনী দলগতজলমির তরলং,”—কখন্ কোন্ ফুৎকারে উড়িয়া যাইবে, তাহার কিছুমাত্র নিশ্চয়তা নাই। তাঁহার সেনানায়কদিগের মধ্যে অনেকেই অর্থগৃধ্নু; যাঁহারা মন্ত্রণাদাতা পাত্রমিত্র, তাঁহারাও অনেকেই মন্ত্রৌষধির ক্রীতদাস; সিংহাসন কাহার,—সিরাজের না শওকতজঙ্গের,—এ সকল গুরুতর প্রশ্নের এখনও মীমাংসা হইতে বিলম্ব রহিয়াছে; এমন অব- স্থায় ইংরাজেরা মনে করিয়াছিলেন যে, সিরাজদ্দৌলার কথায় দুর্গ- প্রাকার চূর্ণ করিবেন কেন? তিনি কি শক্রসঙ্কুল রাজসিংহাসন পশ্চাতে ফেলিয়া স্বয়ং সসৈন্যে এত দুর অগ্রসর হইতে সাহস পাইবেন? এ যুদ্ধসজ্জা কেবল বাহ্যাড়ম্বর ভিন্ন আর কি হইতে পারে? ইহার জন্য আবার প্রাণপণ করিয়া নগররক্ষার আয়োজন করিয়া কি হইবে? বাহ্যাড়ম্বর বিস্তার করিবার জন্য নবাব-সেনা সত্য সত্যই কলিকাতা পর্য্যন্ত অগ্রসর হইলেই বা আতঙ্কিত হইবার কারণ কি? বাণিজ্য রক্ষার জন্য কত সময়ে কত অর্থ অনর্থক অপব্যয় করিতে হয়;—না হয় এতদুপলক্ষে নবাবসেনানায়কদিগের মনস্তুষ্টিসাধনার্থ কিঞ্চিৎ অপব্যয়