পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/১৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ইংরাজ বণিকের মনের ভাব।
১৬১

ছিল না। তাহার পর যখন সংবাদ পাইলেন যে, মর্ম্মাহত সিরাজদ্দৌলা কাশিমবাজার অবরোধ করিয়া, ইংরাজ রাজকর্ম্মচারী ওয়াট্‌স্‌ সাহেবকে কারারুদ্ধ করিয়া মুচলিকা-পত্র স্বাক্ষরিত করাইয়া লইয়া, স্বয়ং সসৈন্যে যুদ্ধ যাত্রা করিতেছেন, তখন আর নিশ্চিন্ত থাকিবার অবসর কোথায়? তথাপি ইংরাজেরা নগর-রক্ষার জন্য যথোপযুক্ত আয়োজন করিলেন না কেন? সিরাজদ্দৌলার বিচিত্র ইতিহাসের আদ্যোপান্ত যেরূপ রহস্যপরি- পূর্ণ, ইংরাজবণিকের এরূপ বিমূঢ় ব্যবহারের মূলেও সেইরূপ নিগূঢ় রহস্য বর্ত্তমান।

 ইংরাজেরা জানিতেন যে, সিরাজদ্দৌলার রাজসিংহাসন “নলিনী দলগতজলমির তরলং,”—কখন্ কোন্ ফুৎকারে উড়িয়া যাইবে, তাহার কিছুমাত্র নিশ্চয়তা নাই। তাঁহার সেনানায়কদিগের মধ্যে অনেকেই অর্থগৃধ্নু; যাঁহারা মন্ত্রণাদাতা পাত্রমিত্র, তাঁহারাও অনেকেই মন্ত্রৌষধির ক্রীতদাস; সিংহাসন কাহার,—সিরাজের না শওকতজঙ্গের,—এ সকল গুরুতর প্রশ্নের এখনও মীমাংসা হইতে বিলম্ব রহিয়াছে; এমন অব- স্থায় ইংরাজেরা মনে করিয়াছিলেন যে, সিরাজদ্দৌলার কথায় দুর্গ- প্রাকার চূর্ণ করিবেন কেন? তিনি কি শক্রসঙ্কুল রাজসিংহাসন পশ্চাতে ফেলিয়া স্বয়ং সসৈন্যে এত দুর অগ্রসর হইতে সাহস পাইবেন? এ যুদ্ধসজ্জা কেবল বাহ্যাড়ম্বর ভিন্ন আর কি হইতে পারে? ইহার জন্য আবার প্রাণপণ করিয়া নগররক্ষার আয়োজন করিয়া কি হইবে? বাহ্যাড়ম্বর বিস্তার করিবার জন্য নবাব-সেনা সত্য সত্যই কলিকাতা পর্য্যন্ত অগ্রসর হইলেই বা আতঙ্কিত হইবার কারণ কি? বাণিজ্য রক্ষার জন্য কত সময়ে কত অর্থ অনর্থক অপব্যয় করিতে হয়;—না হয় এতদুপলক্ষে নবাবসেনানায়কদিগের মনস্তুষ্টিসাধনার্থ কিঞ্চিৎ অপব্যয়