ফরাসীবীরগণ জীবনবিসর্জ্জন করিতে কাতর হইবে না![১] এই নিদারুণ বিপৎসময়ে চিরশত্রু ফরাসীবণিকের এরূপ মর্ম্মভেদী পরিহাসবাক্যে ইংরাজেরা নিতান্ত নিরুপায় হইয়া বাহুবলে আত্মরক্ষার জন্য দলে দলে সমর-শিক্ষায় নিযুক্ত হইলেন।
নগররক্ষার আয়োজন শেষ হইবামাত্র ইংরাজেরা নিতান্ত অসহিষ্ণু হইয়া উঠিলেন। সিরাজদ্দৌলার অভিপ্রায় কি;—তিনি কাশিমবাজারের ন্যায় বিনা রক্তপাতে সমুদয় তর্কের মীমাংসা করিবেন, কিম্বা অসিহস্তে কলিকাতার পল্লীতে পল্লীতে রক্তগঙ্গা প্রবাহিত করিবেন;—সে কথা কেহই বিচার করিবার চেষ্টা করিলেন না! সিরাজদ্দৌলা যখন অর্দ্ধপথে অগ্রসর, সেই সময়ে ইংরাজেরা কথঞ্চিৎ আত্মবলের পরিচয় দিবার জন্য ব্যাকুল হইয়া উঠিলেন।
জলপথে বহিঃশত্রুর আক্রমণনিবারণের জন্য কলিকাতার আড়াই ক্রোশ দক্ষিণে, ভাগীরথীর পশ্চিমতীরে, টানা নামক স্থানে, নবাবী আমলে একটি ক্ষুদ্র দুর্গ সংস্থাপিত হইয়াছিল।[২] সে দুর্গে ১৩টি কামান লইয়া ৫০ জন সিপাহী নদীমুখ রক্ষা করিত, এবং বহুদিন শত্রুসেনার সন্ধান না পাইয়া সকলেই নিরুদ্বেগে বিশ্রামসুখ উপভোগ করিত। ইংরাজেরা ১৩ই জুন প্রাতঃকালে চারিখানি যুদ্ধজাহাজ লইয়া সহসা এই ক্ষুদ্র দুর্গ আক্রমণ করিয়া, প্রচণ্ডপ্রতাপে গোলাবর্ষণ করিতে আরম্ভ করিলেন। অকস্মাৎ বজ্রনিনাদে হতবুদ্ধি হইয়া, সিপাহী-সেনা হুগলী অভিমুখে পলায়ন করিল; টানার ক্ষুদ্র দুর্গপ্রাচীরে বৃটিশ-বিজয়-বৈজয়ন্তী সগৌরবে অঙ্গবিস্তার করিবামাত্র বৃটিশবাহিনী দুর্গপ্রাচীরের আগ্নেয়াস্ত্র