পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/১৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
গুপ্তচর।
১৬৯

করিয়া, সিরাজদ্দৌলাকে নানাপ্রকারে অপমান করিতে কিছুমাত্র ত্রুটি করেন নাই। কিন্তু এখন সকলেই শুনিলেন যে, সিরাজদ্দৌলা রাজবল্লভের সঙ্গে সন্ধি সংস্থাপন করায়, তিনিও নবাব-সেনার সহিত কলিকাতায় শুভাগমন করিতেছেন। ইংরাজদিগের মনে হইল যে, নবাবসেনা নগরোপকণ্ঠে পদার্পণ করিতে না করিতে কৃষ্ণবল্লভও পিতার ন্যায় সিরাজদ্দৌলার অনুগত হইয়া পড়িবেন, এবং হয় ত, নবাব-শিবিরে পলায়ন করিয়া, ইংরাজদিগের গৃহছিদ্রের সন্ধান প্রদান করিয়া, নগরাক্রমণের সহায়তা সম্পাদন করিতে ইতস্ততঃ করিবেন না। অতএব সকলে মিলিয়া কৃষ্ণবল্লভকে রাজবিদ্রোহী অপরাধীর ন্যায় ইংরাজদুর্গে কারারুদ্ধ করিয়া ফেলিলেন। ইংরাজদিগের এইরূপ নিষ্ঠুর ব্যবহারে দেশের লোক শিহরিয়া উঠিল।

 দেশীয় বণিকদিগের মধ্যে অনেকেই কলিকাতায় বাসস্থান নির্ম্মাণ করিয়াছিলেন। নগরাক্রমণকালে পাছে তাঁহাদের কোন রূপ অনিষ্ট হয়, সেই জন্য চরাধিপতি রাজা রামরামসিংহ গোপনে উমিচাঁদকে একখানি গুপ্তলিপি পাঠাইয়া দূর স্থানে সরিয়া পড়িবার জন্য উপদেশ করিয়া পাঠাইলেন। ইংরাজদিগের তীব্র তাড়নায় গুপ্তচরের নিকট হইতে সেই পত্রখানি ইংরাজদিগেরই হস্তগত হইল। তখন সকলেই তর্জ্জন গর্জ্জন করিয়া উমিচাঁদকে কারারুদ্ধ করিবার জন্য লোকলস্কর প্রেরণ করিতে লাগিলেন। উমিচাঁদ ইহার বিন্দুবিসর্গ কিছুই জানিতে পারেন নাই; তাঁহাকে সহসা ইংরাজসেনা বন্দিবেশে রাজপথ দিয়া টানিয়া লইয়া চলিল; দেশের লোক হাহাকার করিয়া উঠিল।