পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/১৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৭২
সিরাজদ্দৌলা।

পক্ষে অপর পারে উপনীত হইবার সুব্যবস্থা করিতে লাগিলেন। সিরাজদ্দৌলার আদেশে ওলন্দাজ এবং ফরাসীবণিক রাজসন্দর্শনে সমবেত হইলেন; ইউরোপে ইংরাজদিগের সহিত সন্ধি হইয়াছে বলিয়া তাঁহারা কলিকাতা আক্রমণে সহায়তা করিতে সম্মত হইলেন না। সিরাজদ্দৌলা তজ্জন্য কোনরূপ পীড়াপীড়ি না করিয়া ফরাসীদিগের নিকট বারুদ চাহিয়া লইয়া কলিকাতাভিমুখে অগ্রসর হইতে লাগিলেন।

 কলিকাতার লোকে সংবাদ পাইয়া একেবারে জড়সড় হইয়া উঠিল; —এত কলকৌশল, এত সগর্ব্ব আস্ফালন, এত রণকৌশল-শিক্ষাপ্রণালী, সকলই যেন সিরাজদ্দৌলার নামে সহসা অবসন্ন হইয়া পড়িল। নগরের মধ্যে তুমুল কোলাহল উপস্থিত হইল। ইংরাজ অধিবাসিগণ যিনি যেখানে ছিলেন,—মুহূর্ত্তের মধ্যে আপন আপন সুসজ্জিত বাসভবনের দিকে সাশ্রুনয়নে একবারমাত্র দৃষ্টিনিক্ষেপ করিয়া স্ত্রী পুত্র লইয়া দুর্গাভ্যন্তরে পলায়ন করিতে লাগিলেন; দেশীয় বণিকগণ যিনি যে পথে সুবিধা পাইলেন, নগর হইতে বহিষ্কৃত হইয়া পড়িতে লাগিলেন; পথে, ঘাটে, নদীসৈকতে, বনান্তরালে, সকল স্থানেই মহাকলরবে নরনারী, বালক বালিকা, শত্রু মিত্র কাতারে কাতারে পলায়ন করিতে আরম্ভ করিল। সকলেই পলায়ন করিল, কিন্তু হায়! ফিরিঙ্গীদল বড়ই বিপন্ন হইয়া পড়িল। ইংরাজের অনুকরণ করিয়া সাহেব সাজিয়া, দেশের লোকের সঙ্গে প্রণয়বন্ধন বিচ্ছিন্ন করিয়া, এতদিন ফিরিঙ্গীদিগকে সবিশেষ ক্লেশভোগ করিতে হয় নাই। কিন্তু আজ বিপদের দিনে তাহাদের মসীমলিন মুক্তির উপর তুষারধবল সাহেবী পরিচ্ছদ বড়ই বিড়ম্বনার কারণ হইয়া উঠিল! সকলেই বুঝিল যে, ফিরিঙ্গীরাই যথার্থ “ন মাতা ন পিতা নচ বন্ধু;”—তাহারা কি বাঙ্গালীদলে, কি সাহেবমণ্ডলীতে, কোন