পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সেকালের অবস্থা।

কেহই বাধা দিতে চাহিত না। চাকলায় চাকলায় এক একজন হিন্দু অথবা মুসলমান “ফৌজদার” অর্থাৎ শাসনকর্ত্তা থাকিতেন; তাঁহারা স্থাকালে রাজস্ব-সংগ্রহের সাহায্য করা ভিন্ন আভ্যন্তরীণ শাসনকার্য্যে হস্তক্ষেপ করিতেন না। গঙ্গা, ভাগীরথী, ব্রহ্মপুত্র বাঙ্গালীর বাণিজ্যভাণ্ডার বহন করিত; সে বাণিজ্যে জেতৃ-বিজিত বলিয়া শুস্কাদানের কোনরূপ তারতম্য ছিল না। মুসলমান নবাব কোন কোন নিদিষ্ট সময়ে পাত্র মিত্র লইয়া দরবার করিতেন, কিন্তু আভ্যন্তরীণ শাসনকার্য্যে প্রায়ই মনোনিবেশ করিবার অবসর পাইতেন না। জগৎশেঠের ইতিহাস-বিখ্যাত বিস্তৃত প্রাঙ্গণে বাদাসাহের নামে স্বর্ণ ও রৌপ্যমুদ্র মুদ্রিত হইত; পরগণাধিপতি জমীদারগণ জগৎশেঠের কোষাগারে রাজস্ব ঢালিয়া দিয়া মুক্তিপত্র গ্রহণ করিতেন; এবং কখন কখন শিষ্টাচারের অনুরোধে রাজধানীতে আসিয়া কাবা চাপিকান পরিয়া, উষ্ণীয বাঁধিয়া, জানু পাতিয়া মুসলমানী প্রথায় নবাব-দরবারে সমাসীন হইতেন।

 দেশে যে অত্যাচার অবিচার ছিল না তাহা নহে; বরং অনেক সময়েই দেশে ভয়ানক অরাজকতা উপস্থিত হইত। কিন্তু সে অরাজকতায় জমীদার ও মহাজনগণ যতই উৎপীড়িত হ’ন না কেন, কৃষককুটীরে তাহার ছায়াস্পর্শ হইত না। কৃষক যথাকালে হলচালনা করিয়া, যথা-প্রাপ্ত শস্যসঞ্চয় করিয়া, স্ত্রীপুত্র লইয়া যথাসম্ভব নিরুদ্বেগেই কালযাপন করিত। দেশে দস্যু তস্করের উৎপীড়নের অভাব ছিল না; কিন্তু দেশের লোকের অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহারেও কোনরূপ নিষেধ ছিল না। সম্রান্ত বংশের যুবকেরাও লাঠি, তরবারি চালনা করিতে জানিতেন। দস্যু তস্করের উপদ্রব হইলে, গ্রামের লোকে দল বাঁধিয়া,