পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/১৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সিরাজের দুর্গপ্রবেশ।
১৮৫

হলওয়েলকে প্রদান করিলেন। হলওয়েল দুর্গ প্রাচীর হইতে সেই পত্রখানি বাহিরে ছুঁড়িয়া ফেলিবামাত্র তাহা কে যেন কুড়াইয়া লইয়া গেল; কিন্তু তাহার আর কোনরূপ প্রত্যুত্তর আসিল না। এদিকে নবাব-সেনার প্রবল পরাক্রমে অনেকেই আহত হইতেছেন, গোরাপল্টন গুদাম ভাঙ্গিয়া মদ্যপান করিয়া অধীর হইয়া উঠিয়াছে, হলওয়েল চারিদিকে ছুটাছুটি করিয়া সেনাসংগ্রহ করিবার চেষ্টা করিতেছেন; এমন সময়ে অবরুদ্ধ ইংরাজসেনা সহসা পশ্চিমদিকের দুর্গদ্বার উন্মোচন করিয়া দিল! সেই উন্মুক্তদ্বারে জলস্রোতের ন্যায় প্রবল প্রবাহে নবাব-সেনা দুর্গমধ্যে প্রবেশ করিতে লাগিল। আর যুদ্ধ করিতে হইল না; সকলেই বন্দী হইলেন; ইংরাজদুর্গের সমুন্নত সিংহদ্বারের উপর সিরাজদ্দৌলার বিজয়পতাকা সগৌরবে অঙ্গবিস্তার করিল।

 সেনাপতি মীরজাফর খাঁ এবং অন্যান্য গণ্যমান্য পাত্রমিত্রদিগকে সঙ্গে লইয়া নবাব সিরাজদ্দৌলা অপরাহ্ণ পাঁচ ঘটিকার সময়ে ইংরাজদুর্গে পদার্পণ করিলেন, এবং দরবারে সমাসীন হইয়াই উমিচাঁদ ও কৃষ্ণবল্লভ কোথায়, তাহার সন্ধান লইবার অনুমতি করিলেন। ইংরাজের ইতিহাসেই লিথিত আছে যে, উমিচাঁদ ও কৃষ্ণবল্লভ যখন সসম্ভ্রমে অভিবাদন করিয়া সম্মুখে দণ্ডায়মান হইলেন, তখন কাহাকেও কোনরূপ তিরস্কার করা দুরে থাকুক, সিরাজদ্দৌলা উভয়কেই যথোচিত সমাদরে আসনপ্রদান করিলেন। যে সকল ইতিহাসে পূর্ব্বকাহিনীর কিছুমাত্র উল্লেখ নাই, সে সকল ইতিহাস পড়িতে পড়িতে মনে হয় যে, যে কৃষ্ণবলভকে লইয়া এত গোলযোগ, তাঁহাকে হাতে পাইয়া এরূপ সমাদর করিবার অর্থ কি? সিরাজদ্দৌলাকে যাহারা নৃশংসম্বভাব উচ্ছৃঙ্খল