পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/২০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮৬
সিরাজদ্দৌলা

যুবক বলিয়া পরিচিত করিতে চেষ্টা করিয়া গিয়াছেন, তাঁহারা কৃষ্ণবল্লভের প্রতি সিরাজের সদয় ব্যবহারের মর্ম্মোদঘাটন করিবার আয়োজন করেন নাই।[১]

 ইংরাজদুর্গের কোষাগার হস্তগত করিয়া, ইংরাজদিগের উদ্ধত ব্যবহারের জন্যই যে তাহাদের এরূপ দুর্গতি হইল, তাহা বুঝাইয়া দিয়া, সিরাজদ্দৌলা বন্দিগণকে আশ্বাসদান করিলেন। ইংরাজেরা বন্দী; সিপাহীগণ তাহাদিগকে বন্দিবেশেই নবাবের নিকট বাঁধিয়া আনিয়াছিল। কিন্তু সিরাজদ্দৌলা তাহা দেখিবামাত্র হলওয়েলের বন্ধনমোচন করিয়া অভয়দান করিলেন। দরবার ভঙ্গ হইল। রণশ্রান্ত বিজয়ী সেনা দল আশ্রয়স্থানের অনুসন্ধানে চারিদিকে সরিয়া পড়িতে লাগিল। সেনাপতি মাণিকচাঁদের উপর শাসনভার সমর্পণ করিয়া, সিরাজদ্দৌলা বিশ্রামভবনে গমন করিলেন। প্রভাতে যে ইংরাজদুর্গ বীরবিক্রমের লীলাভূমি বলিয়া স্পর্ধা করিতেছিল, সায়াহ্নে সেই দুর্গাভ্যন্তরে ইংরাজ বন্দী আর মুসলমান ভূপতি নিশ্চিন্ত হৃদয়ে বিরামশয্যায় নিদ্রাভিভূত হইলেন।

 ইংরাজ ইতিহাস-লেখকেরা বলেন যে, যাহারা আত্মসমর্পণ করিয়া বন্দী হইয়াছিলেন, সেই সকল হতভাগা ইংরাজ নরনারী, নিদাঘ সন্তপ্ত গভীর রজনীতে ক্ষুদ্রায়তন কারাকক্ষে নিদারুণ মর্ম্মযাতনায় ছট্‌ফট্ করিতে করিতে, অনেকেই প্রাণবিসর্জ্জন করিতে বাধ্য হইয়াছিলেন!

  1. রাজবল্লভের সহিত সন্ধিস্থাপন করিবার সময়ে সিরাজদ্দৌলা কৃষ্ণবল্লভের সকল অপরাধ ক্ষমা করিয়াছিলেন। তাহার পর ইংরাজেরা কৃষ্ণবল্লভকে বিনাদোষে কারারুদ্ধ করায় সিরাজদ্দৌলার সহানুভূতি কৃষ্ণবল্লভের কল্যাণকামরায় আকৃষ্ট হইয়া পড়িয়াছিল;—ইহাই একমাত্র ঐতিহাসিক কারণ বলিয়া রোধ হয়।