পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/২০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮৮
সিরাজদ্দৌলা।

চেষ্টা করিলাম। স্মৃতিমাত্র অবলম্বন করিয়া লিখিতে বসিয়াছি; কিন্তু এক বর্ণও অতিরঞ্জিত করিয়া তুলিতে পারিব না;—যাহাই লিখি না কেন, তাহাতে প্রকৃত দুর্দশার অংশমাত্রও প্রকটিত হইবে না!

 “অন্ধকূপের কথা লিখিবার পূর্ব্বে পূর্ব্ববর্তী কয়েকটি ঘটনার বর্ণনা করা আবশ্যক। অপরাহ্ণ ছয় ঘটিকার সময়ে নবাব ও তাঁহার সেনাদল দুর্গপ্রবেশ করেন। আমার সঙ্গে সেদিন নবাবের তিনবার দেখা হয়। সাত ঘটিকার একটু পূর্ব্বে শেষ সাক্ষাৎ;—তিনি তখনও এই বলিয়া আশ্বাস দিলেন যে, তিনিও একজন বীরপুরুষ, এবং বীরপুরুষের ন্যায় বলিতেছেন, ‘আমাদের কিছুমাত্র অনিষ্ট হইবে না।’ আমার এখন পর্যন্তও এইরূপ বিশ্বাস রহিয়াছে যে, আমাদের সম্বন্ধে নিতান্ত সাধারণভাবে হুকুম দেওয়া ব্যতীত, কোথায় রাখিতে হইবে, কেমন করিয়া রাখিতে হইবে, এ সকল কথা সিরাজদ্দৌলা কিছুই বলিয়া দেন নাই। আমরা যেন পলায়ন করিতে না পারি,—বোধ হয় এই পর্য্যন্তই বলিয়া থাকিবেন! যাহারা এই কয় দিনের যুদ্ধকলহে চিরনিদ্রায় অভিভূত হইয়াছিল, তাহাদের সহকারী সিপাহীগণ, প্রতিশোধ লইবার জন্যই আমাদের এরূপ দুর্গতি করিয়াছিল; ইহাই আমার ধারণা।

 “সন্ধ্যা হইল। অন্ধকার ঘনীভূত হইয়া আসিতে লাগিল। একজন প্রহরী আসিয়া আমাদিগকে একটি বিস্তৃত বারান্দায় খিলানের কাছে বসিতে বলিল। সে স্থান অন্ধকুপ কারাগার এবং প্রহরী-বারিকের পশ্চিম দিকে। সম্মুখে ময়দান। সেখানে মশাল জ্বালাইয়া চারি পাঁচ শত গোলন্দাজ দাঁড়াইয়া ছিল। আমরা চাহিয়া দেখিলাম যে, চারিদিকেই আগুন লাগিয়া উঠিয়াছে। বড় ভয় হইল। সকলেই ভাবিলাম যে, আমাদিগকে পোড়াইয়া মারিবার জন্যই বুঝি এত লোক