পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/২০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৯২
সিরাজদ্দৌলা।

বার জন্য চেষ্টা করিতে লাগিল; —কিন্তু সে প্রচণ্ড বিক্রম বিফল হইল; দ্বার খুলিল না!

 “তখন ক্রোধান্ধ-কলেবরে সকলে মিলিয়া উন্মত্তের মত আস্ফালন করিতে লাগিল। আমি দেখিলাম যে, সে নিষ্ফল ক্রোধে কেবল শরীর মন শীঘ্র শীঘ্র অবসন্ন হইয়া পড়িবে। সুতরাং শান্ত হইবার জন্য বারবার অনুরোধ করিতে লাগিলাম।

 “সকলে শান্ত হইলে, অবসর পাইয়া কিংকর্তব্য চিন্তা করিবার চেষ্টা করিতেছি, এমন সময়ে পার্শ্বস্থ আহত বন্ধুদ্বয় মৃত্যু-যাতনায় বিকট আর্ত্তনাদ করিতে লাগিলেন। নানাভাবে মানুষকে দেহত্যাগ করিতে দেখিয়া, এবং সর্ব্বদা মৃত্যুকাহিনী আলোচনা করিয়া মৃত্যুচিন্তা অভ্যস্ত হইয়া গিয়াছে। নিজের জন্য ভয় হইল না; কিন্তু সহকারীদিগের যন্ত্রণা দেখিয়া স্থির থাকিতে পারিলাম না।

“পাহারাওয়ালাদের মধ্যে একজন বৃদ্ধ জমাদার ছিল। মুখ দেখিয়া মনে হইল, সে যেন আমাদের মর্ম্মযাতনায় কাতরতা অনুভব করিতেছে! তাহা দেখিয়া কথঞ্চিৎ সাহস হইল। তাহাকে জানালার কাছে ডাকিয়া আনিয়া বলিলাম যে, স্থানাভাবে আমাদের বড়ই দুর্গতি হইতেছে। সে যদি অন্ততঃ অর্দ্ধেক লোক আর একটি ঘরে রাখিতে পায়ে, তবে প্রভাত হইবামাত্র সহস্র মুদ্রা পুরস্কার পাইবে। জমাদার চলিয়া গেল; কিন্তু একটু পরে ফিরিয়া আসিয়া বলিল,—“অসম্ভব!” আমি ভাবিলাম যে, পারিতোষিকের অঙ্ক বুঝি কম হইয়াছে, তখন দুই সহস্র মুদ্রার প্রলোভন দেখাইলাম। জমাদার আবার চলিয়া গেল; কিন্তু এবার ফিরিয়া আসিয়া বলিল যে,—একেবারেই অসম্ভব। নবাব নিদ্রাগত। তাঁহার অনুমতি না লইয়া এমন কার্য্যে কে