পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/২০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৯৪
সিরাজদ্দৌলা

পাড়াপাড়ি করিয়া জানালা ঘিরিয়া দাঁড়াইয়া আছে; সুতরাং জানালার নিকটে পৌঁছিতে পারিলাম না। জানালার ধারে একসারি লোক, তাহার পরে আর একসারি,—তাহার পরে আরও একসারি! অনেক চেষ্টায় সেই তৃতীয় সারিতে একটুমাত্র স্থান পাইলাম; সেখান হইতেই হাত বাড়াইয়া জানালার গরাদে চাপিয়া ধরিলাম।

 “বেদনা এবং শ্বাসকষ্ট যেন দূর হইয়া গেল, কিন্তু পিপাসা একে বারে অসহ্য হইয়া উঠিল। এতক্ষণ নীরবে সকল কষ্ট বহন করিতেছিলাম;—আর পারিলাম না! একেবারে অধীর হইয়া মর্ম্মবেদনায় আর্ত্তনাদ করিয়া উঠিলাম,—“ঈশ্বরের দোহাই! আমাকে একটু জল দাও।” সাড়াশব্দ না পাইয়া সকলেই ভাবিয়াছিল যে, আমি বুঝি বহুক্ষণ পঞ্চত্বলাভ করিয়াছি। কিন্তু সাড়া পাইবামাত্র সেই পরিচিত কণ্ঠস্বরে উত্তেজিত হইয়া সকলেই সেই মৃত্যুযন্ত্রণার মধ্যে “জল দাও, জল দাও” বলিয়া আমাকে জলদান করিবার জন্য ব্যস্ত হইয়া উঠিল।

 “প্রাণ ভরিয়া জলপান করিলাম। কিন্তু সে অতৃপ্ত পিপাসা কিছুতেই তৃপ্তিলাভ করিল না! তখন জলপানে বিরত হইয়া ঘর্ম্মবিন্দু সংগ্রহ করিয়া ওষ্ঠসিঞ্চনের চেষ্টা করিতে লাগিলাম। হায়! হায়! সে ঘর্ম্মবিন্দুর বিন্দুমাত্রও মাটিতে পড়িয়া গেলে, কত কষ্টই বোধ হইতে লাগিল!

 ১১॥৹টার মধ্যেই সকলে বিকারগ্রস্ত হইয়া উঠিল। কেহ কেহ এমন উন্মত্ত হইয়া উঠিল যে, আর কিছুতেই শান্ত করা গেল না। যাহারা জানালার আশ্রয় পাইয়াছিল, কেবল তাহারাই কথঞ্চিৎ শান্ত ভাবে দাঁড়াইয়া রহিল। বাতাস,—বাতাস,—আর একটু বাতাস,—আরও একটু বাতাস,—চারিদিক হইতে কেবল এই মর্ম্মভেদী আর্তনাদ!