পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
একালের সভ্যতা।

কবিকঙ্কণের চণ্ডীর গান গাহিত, এবং আপন আপন বাসস্থলীতে নিপুণভাবে প্রসন্নচিত্তে আপন কার্য্যে নিযুক্ত থাকিত।

 অভাব অল্প হইলে দুঃখও অল্প হইয়া থাকে। সভ্যতাবিরোধী সুচিক্কণ সূক্ষ্ম বস্ত্রের জন্য সকলেই লালায়িত হইত না; দেশের মোটা ভাত মোটা কাপড়েই অধিকাংশ লোকের একরকম দিন চলিয়া যাইত। পাঠশালায় গুরুমহাশয়ের অথবা তাহার বেত্রিদণ্ডের মহিমায় যথা সম্ভব বিদ্যাভ্যাস করিয়া বালকেরা অবসর সময়ে মাঠে মাঠে ছটাছুটি করিয়া বেড়াইত, কখন বা ঘোড়া ধরিয়া তাহার অনাবৃত পৃষ্ঠে নিতান্ত সুসঙ্গীতরূপে একজনের স্থানে দুই তিন জন চাপিয়া বাসিত, কখন বা বর্ষার জলে নদ, নদী, খাল, বিলে ঝাঁপাঝাঁপি করিয়া সাঁতার কাটিত, সময়ে অসময়ে গৃহস্তের গরু বাছুর চরাইয়া হাটবাজার বহিয়া, দিন-শেষে ঠাকুরমার উপকথায় হুঁ দিতে দিতে স্নেহের কোলে ঘুমাইয়া পড়িত। যুবকদল দিবসে তাস পাশা খেলিয়া, দাবী ব’ড়ে টিপিয়া, বৈকালে লাঠি ভরবারি ভাজিত; সন্ধ্যা-সমাগমে সযত্ন-বিন্যস্ত লম্বা কেঁচা দোলাইয়া অনাবৃত দেহ-সৌষ্ঠবের গৌরব বাড়াইবার জন্য কঁধের উপর রঙ্গিন গামছা ছড়াইয়া দিয়া বাবরী-চুলে চিরুণী গুজিয়া, শুক সারী অথবা নিতান্ত অভাবপক্ষে একটা পোষা বুলবুল্ হাতে লইয়া তাম্বুল-রাগ-রঞ্জিত অধরৌষ্ঠে মৃদুমন্দ শিস্ দিতে দিতে—পাড়ায় বেড়াইতে বাহির হইত। বৃদ্ধের গৃহকর্ম্ম সারিয়া, পর্য্যাপ্ত ভোজনের পর তৈলাক্ত-স্নিগ্ধতনু দিবা নিদ্রায় সমাহিত করিয়া সায়াহ্নে তামাকু সেবনের জন্য চণ্ডীমণ্ডপে নদীসৈকতে অথবা বৃক্ষতলে সমবেত হইয়া, দেশের কথা, দশের কথা, “ওপাড়ার মুখুয্যেদের বিধবা ভাদ্রবধুর কথা,”—কত কি আবশ্যক অনাবশ্যক বিষয়ের মীমাংসা করিয়া, সন্ধ্যার পর হরিসংকীর্ত্তনে অথবা